টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : সোমবার (১০ মে) ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেও রোগী দেখা বন্ধ হয়নি টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসীর টি-রোড সংলগ্ন দাদার থেকে পাওয়া হাতুড়ে কবিরাজ হাফিজুল ইসলামের।
উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের গরুর হাট সংলগ্ন টি-রোড এলাকায় প্রায় ১যুগের অধিক সময় ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন গাছ গাছালির ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসার নামে ভয়াবহ অপচিকিৎসা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার করিরাজ খানা খোলার সাথে সাথেই সকাল থেকেই ভিড় করেন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত রোগীরা। চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আকৃষ্ট করেন রোগীদের। তার মূল টার্গেট হয়ে থাকে অল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত অসহায়, খেটে খাওয়া দিনমজুর, দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরা।
সাদিক নামের এক শিশুর মা জানান, আমার ছেলে খেলতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পায়। আমি হাসপাতালে গেলে ডাক্তার আমাকে এক্সরে করান। এক্সরে রিপোর্টে দেখে বলে আপনার ছেলের পা ভেঙেছে এবং পুরোপুরি ঠিক হতে সদর হাসপাতাল থেকে অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু সদরে যাবার মত সামর্থ্য না থাকায় আমি শোনা কথায় গোবিন্দাসী কবিরাজের কাছে যাই। সে এক্সরে রিপোর্ট দেখে বলে এটা ঠিক করতে ৭দিন সময় লাগবে। সেই মোতাবেক ৫০০ টাকা দিয়ে বাঁশের কাঠি ও তামাক পাতা দিয়ে জলপট্টি (পল্লব) দেন কবিরাজ হাফিজুর। জলপট্টি দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি গেলে ওইদিন রাত থেকেই প্রচন্ড ব্যথা ও পা অস্বাভাবিক ফোলা শুরু হয়। পরে ছেলের কান্না দেখে কবিরাজকে ফোন করলে জলপট্টিতে সে পানি ঢালতে বলে। কিন্তু এতেও ব্যথা না কমলে জলপট্টি খুলে দেখি পায়ের চামড়া সাদা হয়ে ফুলে লালচে হয়ে গেছে। ছেলের পায়ের এমন দশা দেখে পরদিন সকালে দ্রুত টাঙ্গাইল সদর হাসপতালে যাই। হাসপাতালের ১০৪ নং ডাক্তার দেখে বলে এটা কোন হাতুড়ে কবিরাজের কাজ। কিছুদিন পরে আসলে ছেলের পা হয়ত টেকানো দায় হয়ে যেত।
মধ্য বয়সী আজমত বলেন, গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আমার হাত ভেঙে গেলে কবিরাজের কাছে যাই। সে দেখেই বলে এটা আমি জলপট্টি আর কিছু ব্যথার ওষুধও দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। বাড়ি গেলে হাত গরম হয়ে ব্যথা লাগলে পানি ঢালি। এভাবে ৭ দিন পার করি। ৭দিন পর আবার তার কাছে গেলে সে জলপট্টি খুলে ফোলা দেখে মালিশ দিয়ে বলেন আকন্দের পাতা দিয়ে ওখানে ছ্যাঁক দিতে। আমি বাড়ি গিয়ে কবিরাজের কথামত ৭দিন সকাল বিকাল ছ্যাঁক দেয়া শুরু করি। কিন্তু ১৫ দিনেও কোন উন্নতি না হলে আর ব্যথা কমার লক্ষণ না দেখে হাসপাতাল যাই। হাসপাতালে মামুন ডাক্তার দেখে বলেন আমার হাত এসব হাতুড়ে কবিরাজের কারণে বাঁকা হয়ে গেছে। এখন পুরোপুরি ঠিক করাতে অনেক কষ্ট পোহাতে হবে।
মধুপুর, ঘাটাইল, গোপালপুর, কালিহাতীর বেশ কয়েকজন হাত ও পা ভাঙা রোগীর সাথে কথা বলে দেখা যায় কয়েকজন হাসপাতাল থেকে ব্যান্ডেজ করে আনলেও সেগুলো খুলে নিজের গাছ গাছালি সহ প্রাচীন ও ভুলভাল নিজের মত করে জলপট্টিসহ বিভিন্ন ওষুধ লিখে দেন। এতে কিছুদিন পর শুধু ব্যথা নয় মেনে নিতে হয়েছে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব।
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আল মামুন জানান, আমি বেশ কিছু রোগী পেয়েছি যাদের হাত পা ভেঙে গেলে তারা গোবিন্দাসীর এক হাতুড়ে কবিরাজের থেকে চিকিৎসা নেয়। যা পরবর্তীতে তাদের কারো হাত পা বাঁকা, ব্যথার স্থানে চুলকানিসহ ফুলে গেলে আমার শরণাপন্ন হয়। এসব রোগীর অবস্থা এতটাই নাজুক যে কিছু রোগীকে সুস্থ স্বাভাবিক করা গেলেও বেশ কিছু রোগীকে মেনে নিতে হয়েছে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব। এসব ভুয়া হাতুড়ে কবিরাজ থেকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শেখ আলাউল ইসলাম বলেন, এই হাতুড়ে কবিরাজের কথা আঞ্চলিক টি টিভি বাংলাতে প্রতিবেদন প্রচারিত হলে আমি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে দেখতে পাই তার চিকিৎসার জন্য নেই কোনো প্রশিক্ষণ বা সনদ। তার রয়েছে শুধু ওষুধ বিক্রির ড্রাগ লাইসেন্স। তাই তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে কবিরাজি চিকিৎসা ও রোগী দেখা বন্ধ করে শুধু ওষুধ বিক্রি করার নির্দেশ দিয়ে আসি। এই আদেশ অমান্য করে পুনরায় রোগী দেখলে তার বিরুদ্ধে আবার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সান নিউজ/এনকে