ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : অর্থের বিনিময়ে চিকন চাল বাইরে পাচার,খামালে চাল না রেখে কারোবাজারে বিক্রি,খাদ্য সংগ্রহের নামে বস্তা প্রতি সেলামী আদায় করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুর রশিদকে অপসারণের পরিবর্তে বদলি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : বিদেশে কান্নাকাটি না করে আমার কাছে আসুন
গত ২৮/০৪/২০২২ তারিখে রংপুর আন্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল ইসলাম সাক্ষরিত এক পত্রে তাকে বদলী করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ি মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
জেলার হরিপুর উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ আড়াই বছর পূর্বে হরিপুরে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন।তিনি যোগদান করার পর থেকে খাদ্য বিভাগে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন : উড়িষ্যা যাচ্ছে ‘অশনি’
আভ্যন্তরীন খাদ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের নামে ব্যবসায়ি ও কৃষকদের নিকট ধান চাল গম সংগ্রহ করতে বস্তা প্রতি ৫০ টাকা হারে সেলামী আদায় করা হয়।যেসব ব্যবসায়ী নিয়মিত সেলামী গুনেন তাদের জামাই আদরে নিম্ন মানের চালও খাদ্য গুদামে নেওয়া হয়।আর যারা সেলামী দিতে আপত্তি জানায় তাদের বির্নির্দেশের নামে পদে পদে হয়রানি করা হয়।
এছাড়াও সংগ্রহ মওসুমে সংগ্রহকৃত চিকন চাল কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঁতাত করে রাতের আধারে বাইরে পাচার করে দেন ওসি এলএসডি আব্দুর রশিদ।এ অবস্থায় বছরের বেশিরভাগ সময়ে খামালে চৌকা করে অর্থাৎ ফাঁকা রাখা হতো।
আরও পড়ুন : হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ
বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী হরিপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র বর্মনকে প্রধান করে পীরগন্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও কারিগরী খাদ্য নিয়ন্ত্রক ,ঠাকুরগাঁও সহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরজমিনে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
২৪/০২/২০২২ তারিখে তদন্ত কমিটি সরজমিনে ওই খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে।তন্মধ্যে এফএস ১নং গুদামের ৩/৮৭০৫০৪ নং খামালে চৌকা করে উপরে ও বাইরে খামাল ঠিক করে রাখা হয়।তদন্তকালে ৮৪ বস্তা চাল কম পায় তদন্তকারী দল। একইভাবে ২/৮৭০৫০৩ নং ডেলিভারি খামালে মজুদের অতিরিক্ত ৮৪ বস্তা চাল বেশি পাওয়া যায়। অর্থাৎ টাকা ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের চাল সময় মতো সরবরাহ না করায় ডেলিভারি খামালের বেশি চাল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন : ‘অশনি’র দেশে আঘাত হানার আশঙ্কা নেই
এছাড়াও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল সরাসরি অটো মিল হতে সরবরাহ করার নিয়ম থাকলেও গুদাম কর্মকর্তা পুষ্টির চালও গুদামে রাখেন।এছাড়াও বেশ কিছু খামালে নিম্ন মানের ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল পাওয়া গেলেও তদন্তকারী দল ২৮ বস্তা নিম্ন মানের চাল পাওয়ার কথা স্বীকার করে প্রতিবেদন দেয়।
পরবর্তীতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম চৌকার তথ্য গোপন করে ছোট আকারের গর্তের কথা স্বীকার করে আন্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রংপুর মহোদয়ের বরাবরে ২৬ ফেব্রুয়ারী তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
আরও পড়ুন : মদপানে ইরানে ১০ জনের মৃত্যু
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান,খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ যে দুর্নীতি করেছেন তাতে তার চাকুরি হতে বরখাস্ত হওয়ার কথা।কিন্তু তিনি অর্থের বিনিময়ে উপরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অপসারণের পরিবর্তে সদরের রুহিয়া খাদ্য খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলী করা হয়।এতে দুর্নীতির ঘটনায় শাস্তির পরিবর্তে তাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
হরিপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র বর্মন জানান,তদন্তকালে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেসব তথ্য ধরা পড়ে তা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে।তিনি তার ভুলের কারণে অনিয়মের জালে ধরা পড়েন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান,আমার বিষয়ে খবর নিতে হলে ইউএনও হরিপুরের কাছে খবর নেন আমি কেমন মানুষ। ডিপার্টমেন্ট আমার বিরুদ্ধে তদন্তের নামে আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে।আমি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।
সান নিউজ/এইচএন