এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ : ‘কিতা(কী) করবাম! কোনো উপায় তো নাই। বাজারে তেলের দামের তেলেসমাতি দেখে অহন(এখন) তেল ছাড়াই রান্না করার চিন্তা করছি। তেল কিনার লাগি অত টেহা কোথায় পাইয়াম (পাবো)? এতো টেহা (টাকা) দিয়া তেল কিনতাম পারতাম (পারবো) না।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর আমিনুলের স্ত্রী হোসনা(৩৫)।তেলের বাজারে তেলেসমাতির কারণে তিনি তেল ছাড়াই রান্না করার পরিকল্পনা এঁটেছেন।
আরও পড়ুন: দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৬
কৃষিশ্রমিক আমিনুল (৩৮) দিনমজুরি করেন। দিন আনেন, দিন খান। ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তার পরিবারে তেল ছাড়া রান্না করা হবে বলে জানান। আমিনুল বলেন, এর আগেও একবার দাম বাড়ার কারণে কিছুদিন তেল ছাড়াই খাইছি। এখন আবার খেতে হবে। তিনি ও তার স্ত্রী হোসনা কষ্ট করে তেল ছাড়া রান্না করা তরকারি খেতে পারেন। তবে তাদের সন্তান আরাফাত (৮) খেতে চায় না।
আমিনুলকে টিসিবির কার্ড পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিসিবির কার্ড দিয়াই কী করবাম? একবারে তো অত টেহা দিয়া এইগুলা কিনতাম পারতাম না। আমিনুল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ৬ নং মাইজবাগ ইউনিয়নের মাইজবাগ পাছপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
এদিকে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হাকিম (২৭)। পাঁচ সদস্যের সংসার তার । সারা দিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভাঙারি জোগাড় করে বাজারে বিক্রি করে দিনে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পান।
তিনি জানান, সব দিনই কামাই একরকম হয় না। যেদিন কামাই না অয় হেই দিন ধারদেনা কইরা সংসার চালাই। পেট যখন আছে, খাওন তো লাগেই। অহন তেলের দাম যে হারে বাড়ছে, তেল ছাড়াই তরকারি খাওন লাগবো। আমরা কোনে রহম খাইলেও পোলাপানে খাইতে চায় না।’
আরও পড়ুন: টিকিট ছাড়া ভ্রমণকারীরা আমার আত্মীয় নন
সম্প্রতি ভোজ্যতেলের নতুন দর অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, যা এতদিন ১৪০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটারের বোতলের দাম হবে ৯৮৫ টাকা।
নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী,পরিশোধিত পাম সুপার তেল প্রতি লিটারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হলো ১৭২ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৩০ টাকা।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারের প্রায় দোকানেই তেল নেই। কিছু দোকানে তেল পাওয়া গেলেও খোলা তেল বিক্রি করছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা। তাও তেল দিবেন কাগজে,বোতলে নয়। আর বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কোন দোকানেই নেই মূল্য তালিকা।
ক্রেতারা বলছেন, গেলো রমজানে গায়ের মূল্যের চেয়েও বেশি দাম দিয়ে তাদের তেল কিনতে হয়েছে। অনেক দোকানদার তেল সিন্ডিকেট করার মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করে বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য।
এদিকে গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিক্রেতারা। তারা বলেন, তেলেই পাওয়া যাচ্ছে না কোম্পানিতে। আমাদের বেশি দামে তেল কিনতে হয় বলেই, বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। এতে আমাদের কিছু করার নেই।
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা
ঈশ্বরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বাজার সহনশীল করার লক্ষ্যে আমরা রমজানেও বাজার তদারকি করেছি। এখন আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাজার মনিটরিং করা হবে। বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করা যাবে না। প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা টানাতে হবে।’
সাননিউজ/এমআরএস