কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ঈদের দিন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় নিহত ২ জনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ঈদের আনন্দের পরিবর্তে অজানা ভবিষ্যতের শঙ্কায় পরিবার দুটির স্বজনেরা দিশাহারা।
আরও পড়ুন : অফিস খুলছে বৃহস্পতিবার
বুধবার (৪ এপ্রিল) সরেজমিনে নিহতদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি গ্রামে পাশাপাশি অবস্থিত পরিবার দুটিতে চলছে শোকের মাতম। নিহত কৃষক খায়রুল মোল্যার (৪৫) বাড়িতে কান্নার আওয়াজে ভারি হয়ে উঠেছে চারিদিকের পরিবেশ। নিহতের একমাত্র ছেলে ইয়াছিনের বয়স ১৫ বছর। নিহতের মা জরিনা বেগম (৭০) বলেন, 'আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। যারা আমার ছেলেকে ঈদের দিন কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই।'
নিহত খায়রুল মোল্যার মেয়ে রাবেয়া বেগম বাড়ির উঠানে গড়াগড়ি খেতে খেতে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'ঈদের দিন আমি শ্বশুর বাড়ি মধুখালি থেকে বাবার বাড়ি গোহাইলবাড়ি আসছিলাম। বাবা আমাকে এগিয়ে আনতে দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন। তখন গোহাইলবাড়ি গ্রামের আরিফের অনুসারী আমজেদসহ কয়েকজন আমার বাবাকে কুপিয়ে মেরেছে।'
এ সময় তিনি আরো বলেন, 'আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আমি মৃত্যুর বদলে মৃত্যু চাই।'
আরও পড়ুন : রাশিয়ান তেল আমদানি বন্ধে প্রস্তাব
নিহত খায়রুলের স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, 'ঢাল, সড়কি, রামদা, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আরিফের লোকেরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে।'
নিহত খায়রুল মোল্যার কয়েকটি বাড়ি পরেই প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় নিহত আকিদুল শেখের (৪৬) বাড়ি। প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার দিন আকিদুল তরমুজ বিক্রি করে বাড়ি ফিরছিলেন। একই গ্রুপের লোক হওয়ায় পথিমধ্যে আকিদুলকেও ওই দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে।
আকিদুল শেখের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার নির্মম হত্যাকাণ্ডে পরিবার ও প্রতিবেশীরা বাকরুদ্ধ। জন্মের সময় মা মারা যাওয়া আকিদুলের মেয়ে আছিয়ার বয়স মাত্র দুই বছর। মায়ের আদর বঞ্চিত আছিয়া এখনো জানে না তার বাবাও আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই।
আরও পড়ুন : ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত ২১
আকিদুল শেখের ৪ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আজিজের বয়স ১৫ বছর, মেজ ছেলে রিয়াজুলের বয়স ১৪ বছর, সেজ ছেলে মমিনের বয়স ১০ বছর এবং ছোট ছেলে মোস্তাকিনের বয়স ৭ বছর। এতিম হয়ে পড়া এই পাঁচ শিশুর দায়িত্ব নিজের কাঁধে পড়ায় তাদের ভবিষ্যৎ এবং ভরনপোষণের সংস্থানের কথা ভেবে নির্বিকার আকিদুলের সত্তর বছর বয়সী অসুস্থ মা।
প্রসঙ্গত, বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী-চরদৈতরকাঠি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন (মঙ্গলবার) প্রতিপক্ষের হামলায় আকিদুল মোল্যা (৪৬) ও খায়রুল শেখ (৪৭) নিহত হন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা জামান সিদ্দিকীর সাথে গোহাইলবাড়ি গ্রামের মরহুম বজলু খালাসির ছেলে আরিফ হোসেনের দীর্ঘদিন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল।
আরও পড়ুন : ক্ষমতা ছাড়ছেন পুতিন
গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় গোহাইলবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন নিয়ে মোস্তাফা জামানের ও আরিফ হোসেনের দুই প্যানেলে নির্বাচিত অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোস্তাফার প্যানেল বিজয়ী হয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে।
আরিফ হোসেনের বড় ভাই শরীফ হোসেন গোপালগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন।
আরও পড়ুন : মাদক ব্যবসায়ীর হামলায় আহত পুলিশ
আরিফ হোসেন ঘোষপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম ফারুক হোসেনের সমর্থক এবং মোস্তফা জামান ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন নবাবের সমর্থক বলে এলাকা সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইন চার্জ মোহাম্মদ নুরুল আলম বুধবার বিকেলে বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
সান নিউজ/এইচএন