সান নিউজ ডেস্ক: গত দুই বছর মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় সাড়ে ৯ মাস বন্ধ ছিল দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। তবে এ বছর করোনার সংক্রমণ তুলনামূলক কম থাকায়, তাই টানা ৯ দিনের ঈদের ছুটিতে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে পারেন এমন আশায় প্রস্তুত কক্সবাজার।
আরও পড়ুন: আন্দোলনের হুমকি দিয়ে লাভ হবে না
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) থেকে টানা ছয়দিন সরকারি ছুটি। এর মধ্যে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২ অথবা ৩ মে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। রোববার (১ মে) মে দিবসের বন্ধ। সব মিলে বুধবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি। এরপর বৃহস্পতিবার একদিন খোলার পর আবার দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাপ্তাহিক ছুটিতে বাড়ি যাওয়া চাকরিজীবীরা ফিরবেন ৮ মে। এসময় অনেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসতে পারেন বলে ধারণা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
তবে, অন্য সময়ের মতো আগাম বুকিংয়ের তোড়জোড় নেই বলে জানিয়েছেন তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের বিপণন নির্বাহী ইমতিয়াজ সুমেল।
তিনি বলেন, টানা ৯ দিনের ছুটি থাকলেও ৪-৬ মে বুকিং হয়েছে। হোটেল-মোটেল জোনের প্রায় তারকা হোটেলের একই অবস্থা। অথচ অন্য সময়ে টানা তিন থেকে পাঁচদিন বন্ধ থাকলেও বুকিংয়ের ফোন রিসিভ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠতে হতো। এখন সেই ব্যস্ততা নেই।
একই কথা বলেন সি-নাইট হোটেলের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজীও। তিনি বলেন, মৌসুমে এমন বন্ধ হলে গ্রুপ এবং ইন্ডিভিজ্যুয়েল বুকিং হতো গেস্ট হাউজগুলোতে। অতিরিক্ত গরমের কারণে এ ছুটিতে সেই চাপ নেই বললে চলে, যা কল আসছে তা স্বাভাবিক। এরপরও ধারণা করা যায়, ৪-৭ মে পর্যন্ত লাখো পর্যটক কক্সবাজার অবস্থান করবেন।
আরও পড়ুন: ভারতের নতুন সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডে
সেই আশায় পর্যটক বরণে তৈরি হচ্ছে পর্যটন নগরীর আবাসান ও খাবারের হোটেলগুলো। চলছে হোটেল ও রেস্তোরাঁ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। এক মাস সময় পেয়ে অনেক হোটেল সংস্কারকাজও করা হয়েছে। তারাও ঈদের পর পর্যটকসেবা দিতে প্রস্তুত। প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-হকাররাও। মাস দেড়েক ধরে সুনসান নীরবতায় থাকা সৈকতজুড়ে কোলাহলমুখর পরিবেশের আশায় সবার যেন পূর্বপ্রস্তুতি এখন কক্সবাজারজুড়ে। ঢেউয়ের গর্জন ও বালিয়াড়ির বুকে ডালপালা ছড়ানো সাগরলতাও যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে প্রায় দেড় লাখের মতো পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। টানা বন্ধে কয়েকদিন একটু বেশি চাপ থাকবে। অন্য দিনগুলোতেও পর্যটক উপস্থিতি মোটামুটি থাকবে আশা করা যায়। সব মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটক আসবে ধরে নিয়েই আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আশা করছি ঈদের আগে আগাম বুকিং আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, বৈশাখে একটু গরম বেশি। কিন্তু মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলে গরমের তীব্রতা কমে। ঈদেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখেছি। তেমনটি হলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য হবে রহমতের বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ঠান্ডায় পর্যটকরা আরামে ঘুরতে পারেন।
আরও পড়ুন: সাবেক এমপি জুবেদ আলী মারা গেছেন
জেলা পরিষদের ছাতা মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, পর্যটকদের জন্য দোকান গোছাতে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকাররা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবায় সৈকত এবং পর্যটন কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম ঘটবে বিবেচনায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সৈকতে পর্যটকদের জন্য খাবার পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুহিতের জানাজা-দাফন নিয়ে জরুরি বৈঠকে সিলেট আ. লীগ
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ঈদে টানা ছুটি পড়েছে, কিন্তু গরমও পড়ছে বেশি। এরপরও পর্যটক সমাগম আগের মতো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে পর্যটক সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করেছি, যেন পর্যটকরা ভালো সেবা পায়। হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ ও পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সৈকত এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে।
সাননিউজ/এমআরএস