সান নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর কলাবাগান মাঠ রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটকের ১২ ঘন্টা পর বিক্ষোভের মুখে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। রোববার (২৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে কলাবাগান থানা থেকে দুজনকে মুক্তি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: মকবুলের থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ পাওয়া গেছে
তবে মুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের কথা বলতে রাজি হননি কলাবাগান মাঠ রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না। এক প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেছেন, তারা (থানা) আমাদের সঙ্গে কোনও অন্যায় করেনি, কেবল বসিয়ে রেখেছে। কখন থেকে বসিয়ে রেখেছে প্রশ্নে তিনি বলেন, সকাল ১১ টা থেকে।
তবে থানা ছাড়া পেয়ে আইডিয়াল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ঈসা আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি অল্প বয়সেই এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতার শিকার হলাম।’
অন্যদিকে, পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে দুপুরের দিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে সরকারি কাজে তারা আর বাধা দেবেন না এই অঙ্গীকার নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে তাদের। রোববার রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সৈয়দা রত্নার মেয়ে শাহগুফতা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ শুধু তার মাকে নয়, ভাইকেও আটক করে রেখেছেন। তারা ভাইয়ের বয়স ১৮ বছরের কম। রত্নার ছেলের হাজতে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজে র্যাবের অভিযানে আটক ১
জানা গেছে, কলাবাগান এলাকার একটি মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা রত্না। তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য। তার ছেলে আইডিয়াল কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী। দুই জনকে দিনভর থানায় আটকে রাখা হয়। তাদের আটকের খবর পেয়ে বেলা ২টার দিকে ওই মাঠে যান মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উদীচীর ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নূরসহ কয়েকজন।
এদিকে, সন্ধ্যার পর থেকে সৈয়দা রত্না ও তার ছেলের মুক্তির দাবিতে ঢাকার কলাবাগান থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করে অ্যাক্টিভিস্টরা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা, মানবাধিকারকর্মী এবং উদীচীর সদস্যরাও ছিলেন।
আরও পড়ুন: রুবেলের কবর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ
পরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) সমিতির প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পুলিশ রত্না আপা ও তার ছেলেকে যেভাবে ছেড়ে দিয়েছে, তেমনি ওই মাঠে থানার ভবন নির্মাণ থেকে সরে আসবে বলে আশা করছি। ওই এলাকায় শিশুদের জন্য খেলার মাঠ একটিই। বিকল্প মাঠের সন্ধান না দিলে সেখানে থানার ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। এজন্য আন্দোলন চলবে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পয়াদক জামশেদ আনোয়ার তপন সাংবাদিকদের বলেন, রত্না আপা ও তার পুত্রকে সারাদিন অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল। আমরা সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশকর্মীসহ এলাকাবাসী থানায় এসে সারাদিন অবস্থানগ্রহণ করেছিলাম। এ বিষয়ে সোমবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ডিআরইউ সাগর-রুনি মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেছি। এছাড়া কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার দাবি নিয়ে বিকেল তিনটাই মাঠেই সমাবেশ করবো। সেখানেই আগামীদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আরও পড়ুন: নাহিদকে ঢাকা কলেজের ছাত্র ইমন কুপিয়েছে
প্রসঙ্গত, পান্থপথের উল্টো দিকের গলির পাশে একটি খোলা জায়গা রয়েছে। এটি তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করে। পাশাপাশি মাঠটিতে ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। এই মাঠে কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই এর প্রতিবাদ করছেন স্থানীয় লোকজন। মাঠটি রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী গত ৪ ফেব্রুয়ারি পান্থপথের কনকর্ড টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন করেন। ‘কলাবাগান এলাকাবাসী’র ব্যানারে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে স্থানীয় শিশু-কিশোর ও স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন। এতে মানববন্ধনের সংগঠকদের অন্যতম ছিলেন সৈয়দা রত্না।
সান নিউজ/এমকেএইচ