মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মোছাৎ আছিয়া খাতুন । বয়স ১০০ ছুঁইছুঁই। একা চলাফেরা করতে পারেন না। তাই মুন্সীগঞ্জ আদালতে নাতিনীর হাত ধরে এসেছেন ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে।
আরও পড়ুন : ৪০টি নবনির্মিত ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন
জানা গেছে, উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের প্রয়াত চান মিয়া খাঁনের স্ত্রী আছিয়া খাতুন। স্বামী মারা গেছে ১২ বছর আগে। স্বামীর মৃতূর পর ছেলে মুক্তার খান কোন খোজঁ খবর নেন না। দেয় না... কোন ভরন পোষনও।
আছিয়া খাতুন স্বামীগৃহে থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন মেয়েদের দেওয়া টাকায়। কিন্তু সেই মেয়েদের দেওয়া টাকাও আতসাৎ করেছে ছেলে মোক্তার খান এবং পুত্রবধূ।
এছাড়াও গত ২০ এপ্রিল ২০২২ তারিখে রাতে ওই বৃদ্ধার আলমারীতে থাকা স্বর্নের কানের দুল ও চেইন চুরি করে নিয়ে যায়। পরে বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করিলে তাকে চড় থাপ্পর মারে, বালিশ চাপা দিয়ে মারার হুমকি দেয়। এরপর হতে ঘরের বাহির হলেই বৃদ্ধাকে গালিগালাজ করছে তার ছেলের পরিবারের অন্য সদস্যরা।
আরও পড়ুন : মকবুলের থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ পাওয়া গেছে
গতকাল শনিবার সকাল ১০ দিকে বাধ্য হয়ে টঙ্গীবাড়ি থানায় ছেলে বিরুদ্ধে মামলা করতে। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘক্ষণ থানায় অপেক্ষায় রেখেও, নেয়নি কোন অভিযোগ। তাই আদালতে এসেছেন মামলা দায়ের করেতে বলে জানান শতবর্ষী বৃদ্ধা।
আজ রবিবার (২৪ এপ্রিল ) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ আমলী আদালতে ছেলে মুক্তার খান ও পুত্রবধূ মারিয়া ইসলাম মিতা টাকা আত্মসাৎ ও ঘর হতে স্বর্ণের চেইন এবং কানের দুল চুরি করে নেওয়ার অভিযোগে অভিযোগ দায়ের করেন বৃদ্ধা।
শুনানী শেষে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়্যাল ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল্লাহ্ আল-ইউসুফ মামলাটি গ্রহণ করে আসামীদের প্রতি সমনের আদেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন : বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে
আদালত চত্বরে বৃদ্ধা আরও বলেন- আমার স্বামী প্রায় ১২ বছর আগে মারা গেছে। ছেলে মুক্তার খান এবং ছেলের-বৌ ভরণ পোষন সেবা করে না। আমার দুই মেয়ে জেরিন খান ও জেনিফার আমার নামে অগ্রনী ব্যাংকে হিসাব নাম্বার খুলে দিয়াছে। ওই হিসাবে প্রতিমাসে তারা টাকা পাঠায়।
কিন্তু আমার ছেলে কৌশলে আমাকে দিয়ে চেকে সই করিয়ে আমার একাউন্ট হতে আমার অনেক টাকা তুলে নিয়ে গেছে। পরে আমি আমার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমার নাতিন সেবা আক্তারকে আমার কাছে আনিয়া রাখছি। কিন্তু ওরা আমার নাতিনের নামে বিভিন্ন বদনাম রটাইতাছে এবং বলতেছে আমার নাতিনের নামে অশ্লিল ছবি বানাইয়া ফেসবুকে ভাইরাল করিয়া দিবে।
গত ২০ এপ্রিল রাতে ১১টার দিকে ওদের কাপড় আমি উঠান হতে নিয়ে আসছি বলে, ওরা আমার ঘরে আসিয়া তন্নতন্ন করে খুঁজে। পরে আমার ঘরের কাঠের আলমারীতে থাকা এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও চেইন চুরি করে নিয়া যায়।
আরও পড়ুন : নাহিদকে ঢাকা কলেজের ছাত্র ইমন কুপিয়েছে
আমি পরের দিন ওদের জিজ্ঞাসা করলে ওরা আমার ঘরে ঢুকে আমাকে চর থাপ্পর মারে ধাক্কা দিয়া আমাকে আমার খাটের উপর ফেলাইয়া দেয়। আর বলে এ বিষয়ে কাউকে জানাইলে এবং আমি বেশি বারাবারি করলে আমাকে বালিশ চাপা দিয়া খুন করিয়া আমার নাতিনী আমাকে খুন করছে বলে মানুষের কাছে প্রচার করবো ।
সে আরও জানায়- শনিবার সকালে আমি মামলা করতে টঙ্গিবাড়ী থানায় গিয়েছিলাম আমাকে সকাল ১০টা হতে বিকেল পর্যন্ত বসাইয়া রাখছে। কিন্তু আমার কোন মামলা নেয় নাই। পরে আমি আদালতে আসছি মামলা করতে।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি থানার (ওসি) মোল্লা সোয়েব আলী বলেন- আমার সাথে ওই মহিলার কোন সাক্ষাত হয়নি। বিষয়টা আমি জানিও না। বৃদ্ধাকে বসিয়ে রাখলে, তা অমানবিক কাজ।
সান নিউজ/এইচএন