মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: ঢাকার গুলিস্থান ফ্লাইওভারে উঠলেই একবারে যানযটহীন পরিবেশে ঢাকা মাওয়া একপ্রেসওয়ে হয়ে আপনি অল্প সময়ে চলে আসতে পারেন ঢাকার কাছে ঢালী আম্বার’স নিবাস রিসোর্টে। বিশাল ১ শত বিঘারও উপরে জমি নিয়ে গড়ে উঠা এই রিসোর্টের প্রাকৃতিক পরিবেশ আর দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে।
আরও পড়ুন: প্রভা এখন পান বিক্রেতা!
এখান প্রাকৃতিকভাবেই শুনা যাবে বিভিন্ন পাখির কলতান এমনকি এ সময়ে মাঝে মধ্যে শুনতে পাবেন আপনি কোকিলের কুহু কুহু শব্দ আর বউ কথা কউ পাখির মিস্টি মধুর ডাকও। ঘন অরণ্যে ঘেরা এই রিসোর্ট ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের বাহেরকুচি এলাকায় অবস্থিত।
স্বচ্ছ পানির বিশাল সুইমিংপুল ও এক্টিভিটিজ, সুন্দর পরিপাটি আর শৈল্পীক ছোঁয়ায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্টটির প্রতিটি রাস্তা। এখানে রয়েছে নীল কাঠের তৈরি পুল আর ঝুলন্ত ব্রিজ। রয়েছে বিশাল লেক। লেকের রয়েছে মাছ। সান বাঁধানো পুকুর ঘাটে আছে নৌকা, নৌকায় চড়ে আপনি ঘুরে বেড়াতে পারবেন অনায়াসে। ২৫০ টাকায় টিকেট কেটে আপনিও উপভোগ করতে পারেন এই রির্সোটের সৌন্দর্য। অথবা রিসোর্টে থাকা ৯৯টি কক্ষের মধ্যে কাটাতে পারেন রাত। এখানে প্রতিটি কক্ষের জন্য আপনাকে গুনতে হবে ৮ হাজার থেকে ৪৫,৯৯০ টাকা।
সরেজমিনে ওই রিসোর্টে দেখা যায়, বিশাল আয়াতনের এই রিসোর্টটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি। রিসোর্টের ভিতরে এখনও অনেক স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তকে প্রকৃতি প্রেমিদের কমতি নেই এই রিসোর্টটিতে।
এখানে ঘুরতে আসা কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের ছাত্র জিদান বলেন, আমি প্রথমবার পরিবারের সাথে এখানে ঘুরতে আসছি। এখানকার সুমিংপুলটা অনেক বড় এবং ভালো। গোসল করে খুব মজা পাচ্ছি।
এই রিসোর্টে ঘুরতে আসা ফজলুর রহমান বলেন, এখানে একটি প্রোগ্রাম ছিলো। সে উপলক্ষ্যে আমরা স্ব-পরিবারে এখানে এসেছি । ঘুরে দেখলাম বেশ ভালো লাগছে। এটার মধ্যে খুব প্লান এবং ডিজাইন আছে।
কলেজ ছাত্র নাহিদ বলেন, মানুষের কাছে থেকে অনেকবার শুনছি এ জায়গাটা অনেক সুন্দর। বাংলাদেশে মধ্যে এতো সুন্দর জায়াগা আছে, এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না। এখানে এসে ঘুরতেছি ভালো লাগতেছে এখানে এসে।
আরও পড়ুন: প্রভা এখন পান বিক্রেতা!
এই রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি মানুষ যাতে এখানে এসে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। ফ্যামেলি নিয়ে ঘুরার একটাই রিসোর্ট বাংলাদেশের মধ্যে সেটা ঢালী আম্বার”স নিবাস। এখানে আসলে মানুষ ক্যাপেললয়ে ঘুরাঘুরি দেখবেন না। এখানে বৈধ ক্যাপলস ছাড়া আমার এখানে রুমও দেই না, ঘুরতেও দেই না। এখানে আমরা পুরুষদের জন্য আলাদ মহিলাদের জন্য আলদা সুমিংপুলের ব্যবস্থা রাখছি। আমরা এখানে একটা কনভেনশন সেন্টার বানাচ্ছি। এটা বাংলাদেশের কোথায়ও এতবড় কনভেনশন সেন্টার পাবেন না। এখানকার কনভেনশন সেন্টারে এক সময়ে ৬ হাজার লোক বসে খেতে পারবে। ১০ হাজার লোকের প্রোগ্রাম অনায়াসে করতে পারবেন। ৩ হাজার গাড়ির পাকিং ব্যাবস্থা করছি। ১০০ বাস এখানে একসাথে রাখতে পারবেন। আমাদের ফুড আইটেম আমি নিজে কট্রোল করি শতভাগ নিরাপদ খাবার পরিবেশন করি। তৈলটা আমি সব সময় বাহিরের তৈল ব্যবহার করি। যে খাবারগুলো এখানে রান্না হয় আমি সবার সাথে বসে একই খাবার খাই। এজন্য খাই টেস্টটা যাতে নষ্ট না হয়। ঢাকার মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠলেই একবারে যানজটমুক্ত পরিবেশে চলে আসতে পারেন এই রিসোর্টে।
এই রিসোর্ট সূত্রে জানা গেছে, এখানে দিনব্যাপী অবস্থানের সময় আপনার জন্য রয়েছে ডে লং প্যাকেজে যেখানে থাকছে এন্ট্রি, সুইমিং ও বাফেট লাঞ্জ। এ জন্য আপনাকে গুনতে হবে জনপ্রতি ১৮৫০ টাকা। এছাড়া উইন্টার স্পেশাল প্যাকেজে থাকছে বাফেট ব্রেকফাস্ট, বাফেট লাঞ্চ ও ইভেনিং স্ন্যাক্স এ জন্য আপনাকে গুণতে হবে জনপ্রতি ২৩৫০ টাকা। একে ইনক্লুড থাকবে না। তবে সুইমিংপুল ইনিক্লুড করলে আপনি পাবেন ১০০ টাকা ছাড়। সুইমিং সুপার ডিল অফারে আপনি মাত্র ৮০০ টাকায় ব্যবহার করতে পারবেন সুইমিংপুল।
নাইট স্টে প্যাকেজে থাকছে এন্ট্রি, পার্কিং, সুইমিংপুল, মর্নিং ব্রেকফাস্ট, ওয়াইফাই এবং রুম সার্ভিস। এই রিসোর্টে রয়েছে মোট ৯৯টি কক্ষ। এর যে কোন কক্ষে আপনি রাত্রি যাপন করতে পারেন।
এখানে বিভিন্ন কক্ষে রাত্রীযাপন করতে হলে কক্ষ বেধে আপনাকে গুনতে হবে প্রতিরাতে নিন্মক্ত ভাড়া-
১। কটেজ রুম-প্রতিরাত ভাড়া ৮ হাজার টাকা মোট রুম সংখ্যা ৪টি
২। ডিল্যাক্স রুম প্রতিরাত ভাড়া ১০ হাজার টাকা মোট রুম সংখ্যা ২০টি
৩। সুপার ডিল্যাক্স রুম প্রতিরাত ভাড়া ১২হাজার টাকা, মোট রুম সংখ্যা ২০টি
৪। ঢালি’স এক্সক্লুসিভ রুম প্রতিরাত ভাড়া ১৪হাজার টাকা মোট রুম সংখ্যা ২০টি
৫। ফ্যামিলি কটেজ রুম ভাড়া ২৪ হাজার টাকা। তবে যদি ওই কটেজের একটি রুম নিতে চান সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ৮হাজার টাকা
৬। ওয়াটার লিলি সুপ্রিম রুম প্রতিরুম ভাড়া ১২ হাজার টাকা মোট রুম সংখ্যা ৫টি
৭। ওয়াটার লিলি প্রিমিয়াম রুম- প্রতিরাত ভাড়া ১৬হাজার টাকা মোট রুম সংখ্যা ২টি
৮। ওয়াটার লিলি সুইট রুম- প্রতিরাত ভাড়া ২২ হাজার টাকা, মোট রুম সংখ্যা ২টি
৯। লুটাস রুম-প্রতিরাত ভাড়া ১৬ হাজার টাকা, মোট রুম সংখ্যা ৮টি
১০। ডান এপ্যার্টমেন্ট প্রতিরাত ভাড়া ৪৫ হাজার ৯৯০টাকা মোট রুম সংখ্যা ১টি
১১। লেইক ভিউ রুম- প্রতিরাত ভাড়া ১৬ হাজার টাকা মোট রুম সংখ্যা ৮টি
১২। ফিল্ড ভিউ রুম- প্রতিরাত ভাড়া ১২হাজার টাকা মোট রুম সংখ্যা ৬টি। এনিয়ে মোট ৯৯টি রুম রয়েছে এই রিসোর্টে।
এছাড়াও এই রিসোর্টে রয়েছে নিন্মক্ত সুবিধা- কার পার্কিং, কায়াকিং, বিশাল সুইমিং পুল, ট্রি হাউজ, রেস্তোঁরা, কিডস জোন, ললে, পিকনিক, কর্পোরেট প্রোগ্রাম বা ফ্যামিলি প্রোগ্রাম করার সুযোগ, হ্যালিপ্যাড, খেলার মাঠ, ক্যান্টিন ইত্যাদি।
বাংলাদেশের বৃহত্তম সুইমিংপুলসহ স্বচ্ছ নীল, প্রশান্তির সবুজ আর নান্দনিক আভিজাত্যময় এই রিসোর্ট রাজধানী থেকে মাত্র ৫০ মিনিট দূরে মুন্সীগঞ্জের বাহারকুচি, ইছাপুরা রোডে অবস্থিত এই বিলাসবহুল রিসোর্ট।
আরও পড়ুন: ১২ গুণী পাচ্ছেন বাচসাস সম্মাননা
কিভাবে আসবেন গুলিস্তান থেকে মাওয়া একপ্রেসওয়ের নীমতলী নেমে কিংবা একপ্রেসওয়ের শ্রীনগর উপজেলার ছনবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি করে বাহেরকচি নামলেই পেয়ে যাবেন রিসোর্টটি।
সান নিউজ/এমকেএইচ