আমিরুল হক, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখি মানুষকে বিশেষ সেবা দিতে দেশের বৃহত্তর রেলওয়ে কারখানা নীলফামারীর সৈয়দপুর কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শ্রমিকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর।
আরও পড়ুন : কৃষি জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব
এই ঈদ যাত্রায় নতুন করে সংযুক্ত হচ্ছে রেলবহরে আরও ৫০টি কোচ। তাই নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পরও অতিরিক্ত সময় দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ করছেন তাঁরা। বাতিল করা হয়েছে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি।
সরেজমিন কারখানার জিওএইচ, উৎপাদন মেশিন শপ, ক্যারেজ শপ, হুইল শপ, বগি শপ ও সিএইচআর শপ ঘুরে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের এমন ব্যস্ততার চিত্র।
এখানে সকাল ৭টা থেকে শুরু করে টানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবিরাম কাজ হচ্ছে কারখানার ২৪টি বিভাগে। এরই মধ্যে প্রস্তুত হওয়া ৩০টি বগি হস্তান্তর করা হয়েছে রেলওয়ের পাকশি ও লালমনিরহাট বিভাগের কাছে।
আরও পড়ুন : টিভি ও অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে সংলাপে ইসি
এছাড়াও আরও ২০ টি বগি হস্তান্তরের লক্ষে কারখানার শ্রমিকদের কেউ করছেন রং এর কাজ, কেউ বডি মেরামতের কাজ, কেউ ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ সেট করছেন, কেউ বা ব্যস্ত চাকা মেরামতে। আবার কেউ ওলেল্ডিং ও কোচের সিট মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের কারও। ঈদে যাত্রী পরিবহণের জন্য বিশেষ এই সেবা দিতে ঘাম জড়ানো কর্মযজ্ঞেও খুশি এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শ্রমিকেরা।
উৎপাদন মেশিন শপের শ্রমিক রেজাউল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখন শুধুমাত্র ৩০ মিনিটের মতো বিরতি ছাড়া আমরা সকাল ৭টায় কারখানায় প্রবেশ করি, আর বের হতে হচ্ছে বিকেল ৫টার পর। তিনি বলেন, সচরাচর সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ হত এখানে। কিন্তু ঈদের কারণে আমাদের এক ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় (ওভারটাইম) কাজ করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন : মাফিয়াদের করা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করি
কথা হয় একই বিভাগের শ্রমিক ইসকেন্দার আলীর সাথে তিনি জানান, ঈদের কারণে যাত্রীসেবায় অতিরিক্ত কোচ তৈরি জন্য বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন, এখানে একটি বিভাগে ৩০০ শ্রমিকের প্রয়োজন হলেও রয়েছে মাত্র ৫০ জন শ্রমিক।
তিনি আরো বলেন, এখানে ১০০ মেশিনটি রয়েছে যার প্রত্যেক মেশিনে অন্তত তিন জন করে শ্রমিক দরকার হলেও শ্রমিক সংখ্যা কম থাকায় তাদের অতিরিক্ত এক ঘন্টা বেশি সময় দিতে হচ্ছে।
হুইল শপের ইলিয়াস হোসেন বলেন, আগে দৈনিক আমি দুই থেকে তিনটি চাকার কাজ করতাম কিন্তু এখন ঈদকে ঘিরে চাপ থাকায় অতিরিক্ত সময় দিয়ে পাঁচটি পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন : তালাবদ্ধ আবাসিক হোটেলে নারীর লাশ
তিনি বলেন, এখন আমরা কোনো ছুটি ভোগ করতে পারছি না আর এসব করছি যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের কথা ভেবে।
কারখানার জিওএইচ শপের ইনচার্জ জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, এই ঈদে আন্তনগরের বিভিন্ন বহরে ৫০টি নতুন কোচ যুক্ত হচ্ছে, এছাড়াও ঈদের সময় যাত্রী চাপও কয়েকগুণ বেশি থাকায় তাঁদের কথা মাথায় রেখে এই সেবার উদ্যোগে নিয়েছি আমরা।
তিনি বলেন, শপে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা কোচ নতুন করে মেরামত করা হচ্ছে। এখানে একটি ৩৬ বছরেরও বেশি বয়সের কোচের কাজ করা হচ্ছে যেখানে কোচটির বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। যা ভালো আছে সেগুলো ঠিক রেখে নতুন করে সেটআপ করে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলছি।
আরও পড়ুন : বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা
জানতে চাইলে সৈয়দপুর কারখানার বিভাগীয় তত্ত¡াবধায়ক সাদেকুর রহমান বলেন, লক্ষ্যমাত্রার ৫০টি কোচের মধ্যে রেলের পাকশি ও লালমনিরহাট বিভাগে ৩০টি কোচ হস্তান্ত— করা হয়েছে। বাকি ২০টির কাজ এখন চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও ঈদে ঘরমুখি যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করতে আমরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আর এই ৫০টি কোচ রেলের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন আন্তনগর ট্রেনের র্যাকে যুক্ত হয়ে যাত্রী পরিবহণ করবে বলে জানান তিনি।
সান নিউজ/এইচএন