এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার: মালয়েশিয়া গেলে পাল্টে যাবে জীবন। এমন স্বপ্নে বিভোর হয়ে মানব পাচারকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। এ জন্য জনপ্রতি রোহিঙ্গা থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে চক্রের সদস্যদের ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে বলে হয় চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী এই রোহিঙ্গারা মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় অন্য দেশে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হয়। কিন্তু তাদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর নারীদের যৌনপল্লিতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এবার আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সন্ধ্যান পেয়েছে র্যাব—১৫।
আরও পড়ুন: এবার বরিসের ওপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা
শনিবার (১৬ এপ্রিল) ভোরে শহরের নাজিরারটেক এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র—গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার র্যাব—১৫—এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর শেখ ইউসুফ আহমেদ জানান, গ্রেফতারকৃতরা আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য এবং মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে ৫২ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে পার্শ্ববর্তী দেশে বিক্রি করে দিয়েছে। ওই রোহিঙ্গাদের বিক্রি করে ফেরার পথেই গ্রেফতার করে র্যাব—১৫। পাচার হওয়াদের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী ও ৮টি শিশু রয়েছে।
আটককৃতরা হলেন—মহেশখালীর উপজেলার ছোট মহেশখালীর সিপাহির পাড়ার গোলাম কুদ্দুসের ছেলে শাহ জাহান (৩৭), ঘটিভাঙা পূর্বপাড়ার নুর মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ পারভেজ (২৩), একই এলাকার আমির হোসেনের ছেলে আবদুল মাজেদ (২৭), ফজল করিমের ছেলে আমির মো. ফয়সাল (২৪), আমির হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ শাকের (৩০) ও মো. মীর কাসেমের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫)।
আরও পড়ুন: খালেদার সাবেক পিএস জাকির মারা গেছেন
উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে—একটি দেশীয় বন্দুক, দুটি থ্রি—কোয়ার্টার গান, চার রাউন্ড কার্তুজ, দুটি রামদা, একটি স্যাটেলাইট ফোন, একটি কম্পাস, একটি জিপিএস ডিভাইস, ১৬টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিম কার্ড। পাচারের কাজে ব্যবহৃত একটি ফিশিং ট্রলারও জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব—১৫—এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর শেখ ইউসুফ আহমেদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের কিছু সদস্য নাজিরারটেক চ্যানেলে অবস্থান করছে—এমন খবর পেয়ে অভিযানে যায় র্যাব। এ সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে অস্ত্র—গুলিসহ ছয়জনকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাবের টিম।
আরও পড়ুন: হামলার নিন্দা জানালেন আফ্রিদি
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, এ চক্রের বিদেশি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার হয়। পাশাপাশি জিপিএসের মাধ্যমে সাগরের গতিপথ চিহ্নিত করে মানব পাচার করে আসছিলেন তারা। বিদেশে পাঠানো বাবদ জনপ্রতি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার চুক্তি করার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটককৃতরা। এ চক্রের আরও সদস্যকে চিহ্নিত করতে পেরেছে র্যাব। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হবে র্যাব জানায়।
সান নিউজ/এমকেএইচ