নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাবার কোলে থাকা শিশু তাসফিয়াকে (৩) গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন: বাংলার আকাশে আজ ‘নতুন সূর্য’
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে ৩টার দিকে নিহত শিশু তাসফিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে পৌঁছলে তাঁর স্বজনরা মরদেহ নিয়ে চৌমুহনী- ফেনী সড়কের সোরেগো পুল এলাকায় অবরোধ করে।
এসময় তারা শিশু জান্নাত (৩) হত্যা ও সন্ত্রাসী হামলার বিচার দাবি করে প্রায় এক ঘন্টার সড়ক অবরোধে চৌমুহনী- ফেনী সড়কে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়।
ওই সময় বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি ঘটনাস্থলে পৌছে দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে স্বজন ও এলাকাবাসী অবরোধ তুলে নেয়।
আরও পড়ুন: সংস্কৃতি রক্ষাই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার
অপরদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত নুর নবীর ছেলে এমাম হোসেন স্বপন (৩০), লতিফপুর গ্রামের সাছুদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন বাবর (২৩) ও একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে দাউদ হোসেন রবিন (১৭)। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেল চারটার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৪নং হাজীপুর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের মালেকার বাপের দোকান নামক স্থানে সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহের (৩৭) এর কোলে থাকা তিন বছরের শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস তাসফিয়াকে শীর্ষ সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে তাঁর বাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। আবু জাহের উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের রাসেদ মিয়ার বাড়ির মৃত জানু সরদারের ছেলে।
নিহতের মামাতো ভাই স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল্যাহ আল মামুন জানান, বাদশা ওই জায়গা থেকে ৬ ফিট মাটি কাটে। এরপর আরও মাটি কাটতে গেলে আমাদের বাড়ির লোকজন তাকে বাধা দেয়। মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে সন্ত্রাসী রিমন ও তার সহযোগীদের নিয়ে বাড়িতে এসে গোলাগুলি করে এবং আমার গর্ভবতী ভাগ্নিকে পেটে লাথি দেয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই নারীকে প্রথমে চিকিৎসা দিতে বলে।
মামুন অভিযোগ করে আরও বলেন, মাটি কাটার বিরোধের জের ধরে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য রহিম, মহিন, সুজনসহ ১০-১৫জন অস্ত্রধারী মালকার বাপের দোকানে এলাকায় অবস্থিত আমার দোকানে এসে আমাকে গালিগালাজ করে। ওই সময় আমার মামা জাহের তার শিশু মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে দোকানে আসে চিপস আর চকলেট কিনে দেওয়ার জন্য। সন্ত্রাসী রিমন আমার মামাকে আমার দোকানে দেখে গালমন্দ করে বলে ‘তোর শেল্টারে এরা এসব করছে। এ কথা বলার সাথে সাথে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোঁড়ে এবং জান্নাতকে ইট দিয়ে আঘাত করে। এরপর মামা দোকান থেকে দ্রুত বের হয়ে বাড়ির দিকে যাবার সময় রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা পেছন থেকে পুনরায় জান্নাতকে এবং মামাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে জান্নাত কানে, মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় এবং মামা চোখে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জান্নাত মারা যায়।
আরও পড়ুন: সংস্কৃতি রক্ষাই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জান্নাতুল ফেরদৌস তাসফিয়াকে বৃহষ্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, সেহরির সময় নিহতের লাশ ঢাকা থেকে নোয়াখালী পৌছায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে তার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৭ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি এবং ১০-১২জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন আগে হাজীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব হাজীপুর গ্রামের রাশেদ মিয়ার বাড়ির মো. আলম পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মো. বাদশার কাছে জমির মাটি বিক্রি করেন। কয়েক দিন ধরে ওই জমি থেকে মাটি কেটে নেন বাদশা। যে পরিমাণ মাটি কাটার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি মাটি কেটে নেয় বাদশা। এ নিয়ে তাকে বাধা দিলে গত সোমবার ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে আলমদের ওপর হামলা চালায় বাদশা। এ সময় তাকে বাধা দিতে আসলে আলমের ভাই ফিরোজের অন্তঃসত্বা মেয়ের পেটে লাথি মেরে জখম করে সন্ত্রাসীরা।
এরপরও সন্ত্রাসী নিয়ে আলমদের ওপর একাধিকবার হামলা চালায় বাদশা। এসব ঘটনায় স্থানীয়ভাবে বৈঠক বসে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার জেরে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী রিমন, মহিন, আকবর, নাঈমসহ ১০-১২ জনের একদল সন্ত্রাসী মালেকার বাপের দোকান এলাকায় এসে গুলি ছুড়লে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
সান নিউজ/এনকে