এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরে মিলছে না আশানুরূপ মাছ। প্রতিদিন মাছ না পেয়ে শুন্য হাতে ফিরে আসছে ট্রলার ও মাঝি-মাল্লারা। এতে জেলেরা দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। আর তাতে লোকসান গুণছেন ট্রলার মালিকেরা।
আরও পড়ুন: প্রাথমিকে ছুটি বাড়ছে না
অনেক ট্রলার মালিক ইতোমধ্যে আর্থিক ক্ষতি পোষাতে না পেরে উপকূলে নোঙ্গর করে রেখেছে ট্রলার। সাগরে মাছের এমন আকালে জেলার বাজারগুলোতে সংকট তৈরি হয়েছে। বাজারে মিলছে মিঠা পানির মাছ। তাও দাম বেশি। অপরদিকে সাগরে জলদস্যুদের উৎপাত ও ট্রলার ডুবির ঘটনা জেলেদের হতাশাগ্রস্ত করে ফেলছে।
গত শুক্রবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরের মাছ আহরণে যাওয়ার সময় কক্সবাজার উপকুলের নাজিরারটেক মোহনায় একটি ফিশিং ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ট্রলারে থাকা সাগরে ভাসমান অবস্থায় ১৭ জেলেকে উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। ঘটনার সাথে সাথে ১০ জন এবং পরে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ট্রলারে থাকা মোট ১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় সব মন্ত্রীর পদত্যাগ
বিষয়টি নিশ্চিত করে ট্রলারটির মালিক জয়নাল আবেদীন জানান, মাছ আহরণে যাওয়া ট্রলারটি সাগরে বিশেষ বস্তুুর সাথে ধাক্কা লেগে তলা ফেটে যায়। এক পর্যায়ে ট্রলারটি ডুবে যেতে থাকে। ফলে জেলেরা সাগরে ভাসমান হয়ে পড়ে।
পরে তাদের চিৎকারে সাড়া দিয়ে স্থানীয় অন্যবোটের জেলেরা তাদের উদ্ধার করে। ট্রলারটির মাঝি রফিকুল ইসলাম জানান, দুই সপ্তাহের জন্য গভীর সাগরে মাছ আহরণে যাচ্ছিলাম। প্রতিমধ্যে চ্যানেলটিতে পৌছার পর বড় একটি ধাক্কা লাগে।
এরপরে ট্রলারটিতে পানি ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভাসমান অবস্থায় সবাইকে উদ্ধার করা হয়। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গত ১৭ মার্চ কক্সবাজার মহেশখালী সোনাদিয়া চ্যানেলে মাছ ধরার ট্রলার ডুবে ২ জেলের মৃত্যু হয়েছে। নিহত জেলেরা হলেন, কুতুবজোম ইউনিয়নের আব্দু শুক্কুরের ছেলে নেছার মিয়া (৩৫) ও একই এলাকার আবু তাহেরের ছেলে আরিফ উল্লাহ (২৬)। কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: কাঁচা মরিচের ঝাল বেড়েই চলছে!
স্থানীয়রা জানায়, নিহতদের লাশ উদ্ধারের কয়েক দিন আগে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া এলাকার মো. পারভেজের মালিকানাধীন ফিশিং বোটে ১৪ জন জেলে মাছ ধরতে যান। সেখানে দুদিন আগে মাছ ধরার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রলারটি। এ সময় ২ জেলে মাছ ধরার জালের সঙ্গে পেঁচিয় পানিতে ডুবে মারা যান। বাকি ১২ জেলে জীবত অবস্থায় তীরে ফিরে আসে।
এছাড়া গত ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১২টার দিকে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার মহেশখালী চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে ৬ জলদস্যুকে আটক করেছে র্যাব—১৫। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজারের মহেশখালী সোনাদিয়ায় অভিযান চালিয়ে ৫ জলদস্যুকে আটক করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় তৈরি বন্দুক ও রাম দা উদ্ধার করা হয়েছে। আটক দস্যুরা হলেন— সোনাদিয়ার মাহমুদের ছেলে মো. রাসেল (৩২), মাতারবাড়ী নতুন বাজারের নুরুল হোসনের ছেলে ওয়াজ উদ্দিন (২৭), মাতারবাড়ী মিয়াজির পাড়ার আবুল হোসনের ছেলে মো. সাগর (২৫), মাতারবাড়ী সাইরার ডেইলের আবুল হোসনের ছেলে আব্দুল মালেক (৩৫) ও কক্সবাজার সদরের নাজিরাটেকের টেকপাড়ার মিয়া হোসেনের ছেলে মো. শহিদ।
ওসি জানান, সোনাদিয়ার পূর্ব—পশ্চিম পাড়ার বরইতলা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাদেরকে আটক করা হয়।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার কারাগারে হাজতির মৃত্যু
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানালেন, রাজস্ব আদায় কম হওয়ার পাশাপাশি সাগরে মাছের অকাল চলায় জেলেদের মাছ শিকারে পাঠাচ্ছেন না অনেক ট্রলার মালিক। আশা করছি দ্রুত এর পরিত্রাণ হবে।
তিনি জানান, গত ২২ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে ৪টি ট্রলারে ডাকতির সময় জলদস্যুর গুলিতে গুলিবিদ্ধ সহ ১৫জন আহত হয় এবং নগদ টাকা, মাছসহ মূল্যবান জিনিস পত্র ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এর পরে জলদস্যুদের ধরতে বিভিন্নস্থানে পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশ তাদেরকে বন্দুকসহ আটক করে করতে সক্ষম হয়।
সান নিউজ/এনকে