মোঃ মনির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার: ময়মনসিংহের ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়নের কাকচর উত্তরপাড়া গ্রামের আট বছর আগে স্বামী হারানো ফরিদা বেগমকে থাকার ঘর উপহার দিলেন সেচ্ছাসেবী সংগঠন রকিব ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন। ঘর পেয়ে খুশি ফরিদা বেগমের পিতাহারা ছোট ছেলে ও মেয়ে।
আরও পড়ুন: লোকটার সবই আছে কিন্তু বুদ্ধি নেই
শুক্রবার (১ এপ্রিল) সকালে নতুন ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন ফাউন্ডেশানের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মিনহাজ, রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আপেল মাহমুদসহ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা স্থানীয় এলাকাবাসী ও সাংবাদিকবৃন্দ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদা বেগম দুই সন্তানের জননী। গত আট বছর আগে তিনি স্বামীকে হারান। একে একে শশুর, শাশুড়ী সবাইকে হারান। তিনি পড়ে যান বিপাকে। দু চোখে দেখেন অন্ধকার। আত্মীয় ও স্থানীয়দের সহায়তায় কোন রকম সংসার চালান। খড়,কুটর থাকার একটা ঘর ছাড়া ছিলনা কোন কিছু। ঘর থাকলেও তা ছিলনা থাকার উপযোগী। বর্ষাকালে চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়তো বিছানায়। বেশী বৃষ্টি হলে থাকতে হতো প্রতিবেশীর বাড়িতে। ফরিদা বেগম দুই সন্তান নিয়ে দুমুঠো খাবারের জন্য লড়াই করে। থাকার ঘরের ব্যবস্থা করবে কি করে। তখনই এই স্বামীহারা অসহায়কে খোঁজে পান রকিব ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মিনহাজ খোঁজ খবর নিয়ে তাদের থাকার ঘর নির্মান করার ব্যবস্থা করেন।
এলাকাবাসী জানান, ফরিদা বেগমের পরিবারে সবাই ছিল আল্লাহতালা তার স্বামী, শ^শুড়, শাশুড়ি একে একে সবাইকে নিয়ে গেছে। ছোট্র দুটি ছেলে মেয়েকে নিয়ে ফরিদা পড়ে যান বিপদে। অনেক কষ্টে চলতে হয় তাদের । তার থাকার ঘরের অনেক সমস্যা ছিল অনেক চেষ্টা করার পর রকিব ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশান তার থাকার ঘর নির্মান করে দিয়েছে। এখন ফরিদা একটু হলেও নিরাপদে ঘুমাতে পারবে।
স্বামীহারা ফরিদা বেগম বলেন, আমার পরিবারে আয় করার মত কেউ নাই। আমার এক মেয়ে ৩য় শ্রেনীতে স্থানীয় রওজাতুল ওলুম মহিলা মাদ্রায় ও ছেলে প্রথম শ্রেনীতে প্রাইমারীতে পড়ে। তাদের পড়াশোনার খরচ নেয়না কেউ। আমার পক্ষে খাবার জোটানোই কষ্ট হয়ে যায়। ছেলে মেয়ে নিয়ে যে ঘরে থাকি একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। ঝড় হলে অন্যের বাড়িতে চলে যায়। রকিব ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশান আমাকে থাকার জন্য একটা ঘর করে দিয়েছে। আমি তাদের জন্য দোয়া করি।
আরও পড়ুন: দুই বিমানের সংঘর্ষে নিহত ৩
স্বামীহারা ফরিদা বেগমের ছেলে ও মেয়ে কান্না ঝড়া কন্ঠে বলেন, আমগর আব্বা, দাদা কেউ নাই। অনেক কষ্ট হয়। আমগর ভাঙ্গা একটা ঘর আছিল। রাইতের বেলা ডর করতো। মেঘের দিন পানি পড়তো ঘোমাইতে পারতামনা। আম্মা বেশি তুফান আইলে অন্যের ঘরে নিয়া যাইতো। এখন আমগর নতুন ঘর অইছে। নতুন ঘর পাইয়া আমরা অহন অনেক খুশি।
রকিব ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশান প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মিনহাজ বলেন, আমার ছোট বেলা থেকেই অনেক ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করার। তাই আমরা সকল বন্ধুরা মিলে চাদাঁ তুলে অসহায়দের সেবা করার প্রত্যয় নেই। আমাদের বন্ধুদের মাঝ থেকে অকালে প্রান হারায় রকিব। তারপর সব বন্ধুরা মিলে রকিব ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশান গড়ে তুলি। এ ফাউন্ডেশানের মাধ্যমে এসব অসহায়দের পাশে দাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। স্বামীহারা ফরিদা বেগমকে যে ঘরটি নির্মান করে দিয়েছি এটি আমাদের নবম ঘর। এছাড়াও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা, পঙ্গুদের দোকান করে দিয়েছে। এমন অসহায়দের খোঁজে খোঁজে বেরকরে একশটি ঘর নির্মান করার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্থানীয় রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আপেল মাহমুদ জানান, ফরিদা বেগম আমার ইউনিয়নের অসহায় একজন মহিলা। তাকে আমার পক্ষে যে টুকু সহায়তা করার করছি ও আগামীতেও করবো। তার ঘরের একটি সমস্যা ছিল। রকিব ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন তারপাশে এসে দাড়িয়েছে। আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই অসায়দের পাশে এসে দাড়ানোর জন্য।
সান নিউজ/এনকে