ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
মাটির মেঝের ওপর টিনের ছাউনি ও চারপাশে বেড়ার এক ঝুপড়ি ঘরে বসবাস তপন দাসের। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ফয়লা মাস্টারপাড়ার মনো মোল্লার বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করেন বাবা মায়ের সঙ্গে।
চলতি বছরে তপন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ হাইস্কুল থেকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীন জিপিএ ৫ পেয়েছে।
তপন দাসের বাবা হরেন দাস এক সময় ছিলেন মোটরগাড়ি চালক। কিন্তু বয়সের ভার আর রোগাক্রান্ত হয়ে হারাতে বসেছেন দৃষ্টি শক্তি। ফলে এখন আর গাড়ি চালাতে পারেন না।
মা সুমিত্রা দাস পরের বাসায় কাজ করেন। সাংসারিক এমন অভাবের মধ্যদিয়ে সারা বছর রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করে চালিয়ে গেছে নিজের লেখাপড়া। কিন্তু বর্তমানে কীভাবে আসবে কলেজের লেখাপড়ার খরচ সে চিন্তায় পড়েছে তপনের পরিবার।
হতদরিদ্র মেধাবী তপন দাস বলেন, এতদিন বাড়িতে থেকে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করেও লেখাপড়া চালিয়ে গেছি কিছুদিনের মধ্যে হয়তো ভর্তি শুরু হবে। কাজ করে অল্প কিছু টাকা জোগাড় করেছি। বাকিটা কোথায় পাবো আর কীভাবেই বা দূরের কোনো কলেজে ভর্তি হয়ে খরচ চালাবো এটা ভেবে কোনো পথ পাচ্ছি না।
মা সুমিত্রা দাস বলেন, আমাদের নিজেদের কোনো জায়গা জমি নেই। পরের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছি। আমার অন্য ছেলেরাও দিনমজুর। তারাও পৃথক সংসার করছে। অভাবের সংসারে স্বামী কোনো কাজ করতে পারেন না। আমিও অসুস্থ তবে বেঁচে থাকার তাগিদে এলাকার শ্যামল বিশ্বাসের বাসায় কাজ করি। ছোট ছেলে তপন দাস লেখাপড়া করে। সংসারের অভাবের তাগিদে এবং নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে তাকে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করতে হয়। স্কুল থেকে বাড়ি কাছে হওয়ায় এতদিন লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পেরেছে। এখন কারিগরি কলেজে ভর্তি হতে হলে শুনছি যশোর অথবা ঝিনাইদহে যেতে হবে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
তিনি আরো বলেন, চেয়েছিলাম নিজেরা না খেয়ে থাকলেও ছোট ছেলেটাকে একটু লেখাপড়া শেখাবো। কিন্তু অভাবের সংসারে আমাদের কাছে এটা দুঃসাধ্য এক ব্যাপার হয়ে গেছে।
প্রতিবেশী রাজু আহম্মেদ বলেন, তপন দাসের সাংসারিক অবস্থা বিবেচনা করলে কথাটা দাঁড়ায় এমন, সাধ আছে কিন্ত সাধ্য নেই। লেখাপড়ার কথা বাদই দিলাম, তারা ঠিকমত খেতেও পায় না। তারপরও লেখাপড়ার প্রতি তপনের আগ্রহ ও ফলাফল সন্তোষজনক।
কালীগঞ্জ ফয়লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম মিঠু বলেন, তপন দাসের পরিবার ভূমিহীন ও অভাবী। তপন দাস নিজে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় তাকে ধন্যবাদ জানাই।
সান নিউজ/সালি