নিজস্ব প্রতিনিধি, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মহান স্বাধীনতা দিবসের পতাকা র্যালির প্রস্তুতিকালে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ সুলতান জনির (৩০) ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোঃ সোহেল রানা (৩৪) সহ ১৫ জনের নামে মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অনন্ত হত্যা মামলায় ৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড
আহত জনির বাবা মোঃ আব্দুস সাত্তার (৬০) বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাতে গৌরীপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২০/৬৬ তাং-২৯/০৩/২২ ইং)। এ মামলায় নাম উল্লেখ ৭ জন ও অজ্ঞাত ৮ জনকে আসামী করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার (২৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনসহ পতাকা র্যালির প্রস্তুতির সময় গৌরীপুর পৌর শহরে নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় জনির ওপর এ বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা এদিন চারদিক থেকে ঘেরাও করে রামদা দিয়ে কুপিয়ে, লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিঠিয়ে জনিকে মারাত্বক জখম এবং তার ডান পায়ের হাটুর প্যাটেল (বাটি) চার খন্ড করে দেয়। গুরুতর আহত জনিকে প্রথমে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রের্ফাড করা হয়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
আরও পড়ুন: ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
জনি পৌরসভার পশ্চিম ভালুকা এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগ ও পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সুনামের সাথে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন শেষে স্থানীয় তালে হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
জনির বাবা আব্দুস সাত্তার সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা পরিষদের সম্ভাব্য ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ করে আসছিল জনি। ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে স্থানীয় লোকজনের কাছে যথেষ্ট গ্রহনযোগ্যতার পাশাপাশি জনির পক্ষে জনমত সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম, সম্পাদক এমরান
এদিকে প্রতিপক্ষ সোহেল রানা ও তার লোকজন জনির জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনের প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ানো জন্য ঘটনার পূর্বে মৃত্যুর হুমকি দিয়েছিল। ঘটনার দিন সোহেল রানা ও তার চাচা মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতিকালে জনিকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
আব্দুস সাত্তার আরও বলেন, জনির হাঁটুর প্যাটেলা (বাটি) চার খন্ডের মাঝে একটি খন্ড খুঁজে না পাওয়ায় তার অপারেশনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে জনির ডান পাটি চিরতরে পঙ্গু হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মেসিডোনিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপে পর্তুগাল
স্থানীয় কয়েকজন জানান, এর আগে গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি সোহেল রানা ও তার লোকজন ইউএনও’র কক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচির প্রস্তুতির কাজে বাধা দিয়ে ইউএনও’র সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি মামলা করেন (মামলা নং-১৮/৪৩ তাং-২১/০২/২১ ইং)।
এদিকে, স্বাধীনতা দিবসে পতাকা র্যালির প্রস্তুতির সময় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে এ ন্যাক্কাজনক হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে।
আরও পড়ুন: কঙ্গোতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ৮ শান্তিরক্ষীর মৃত্যু
এ ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সর্বস্তরের লোকজন। জনির সুস্থতা কামনায় স্থানীয় তালে হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী জানান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জনির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরদের নামে বিভিন্ন অপরাধে গৌরীপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ঘটনার পর থেকে তারা গা-ঢাকা দিয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য জন্য পুলিশী জোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সান নিউজ/এমকেএইচ