রহমত উল্লাহ, টেকনাফ (কক্সবাজার): বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ কোনারপাড়ায় আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এখনও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া পাচারের সময় ৫৪ রোহিঙ্গা আটক
এদিকে আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রি তার বসতবাড়ী পুড়িয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন, অপরদিকে বসত ভিটে কেড়ে নিতে প্রতিপক্ষের অব্যাহত হুমকি-ধামকিতে উদ্বেগ আতংকে রয়েছে। ঘটনার ১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসনসহ কেউ সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। কোনো রকমের সহায়তা না পেয়ে চরম দুঃখ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। শুধুমাত্র মারোত নামে একটি সংগঠন তাদের সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে ।
এর আগে গত ৬ মার্চ ভোররাত আনুমানিক ২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ কোনাপাড়া এলাকায় বিক্রিত জমি পূনরায় দখল করার পাঁয়তারা ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রতিপক্ষরা বসতবাড়ি পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে।
এ সময় বাড়ির মালিক ও পরিবারের সদস্যরা প্রাণে রক্ষা পেলেও বাড়িতে থাকা নগদ টাকা, জমি ক্রয়ের মূল স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির মালিক আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা (নং- সিআর ৯২/২০২২) দায়ের করেন। আসামিরা মামলা প্রত্যাহার করিতে চাপ দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: সৌদি তেলের ডিপোতে রকেট হামলা
মামলা প্রত্যাহার না করিলে অভিযুক্তরা উল্টো ক্ষতিগ্রস্থ আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রি ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে যে কোন মুহুর্তে তাদের (বাদীর) বসত বাড়িতে কৌশলে মাদক দিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীকে আটক করিয়ে দেবে মর্মে প্রকাশ্য হুমকি দিচ্ছে।
এছাড়া ২৩ মার্চ সকালে প্রকাশ্যে দিবালোকে ওই মামলার ১নং বিবাদী আলমগীরের নেতৃত্বে অপর আসামিরা আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রির বসতভিটে জবর দখলের উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র, লোহার রড, লাটি ও দা হাতে প্রকাশ্যে দিবালোকে হামলা চালায়। তখন বসতভিটায় থাকা আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রীর স্ত্রী পারভীন আকতার চিৎকার করিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে এবং তাৎক্ষণিক শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম ঘটনাস্থলে আসলে তারা পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: লালপুরে গম ক্ষেত থেকে নবজাতক শিশু উদ্ধার
আসামিরা পালিয়ে যাবার সময় যে কোন মুহুর্তে আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রীর বসতভিটে কেড়ে নিবে এবং হত্যা করিয়া লাশ গুম করিবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। এ ঘটনায়ও টেকনাফ মডেল থানায় অপর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় প্রবীণ মুরব্বী ও জমি ক্রয়ের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী আবু তালেব, সোলায়মান, ছৈয়দ করিম চৌকিদার এ প্রতিবেদককে জানান, ২০/২২ বছর আগে মকবুল আহমদ (প্রকাশ) মকবুল মাঝি হতে আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রি আন-রেজিষ্ট্রার্ট স্ট্যাম্প মূলে ২০শতক জমি ক্রয় করেন। মকবুল মাঝি পরবর্তীতে জমির কাগজপত্র নিয়ে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার কথা থাকলেও তাহার ক্রয়কৃত সম্পত্তি ও টাকা আত্মসাত করার কু-মানসে সময়ক্ষেপণ করে থাকে এবং পরে জমি রেজিষ্ট্রি দিবে না মর্মে জানায়। এ নিয়ে ইতিপূর্বে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে একধিকবার সালিস বৈঠকও হয়। যাহার স্বাক্ষী প্রমাণও আছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে কমেছে অধিকাংশ সবজির দাম
ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির মালিক আবদুল কুদ্দুস জানান, জমি রেজিষ্ট্রি বিষয়ে রবিবার (৫ মার্চ) অভিযুক্তদের সাথে তর্কবিতর্ক হলে ভোররাতে আমার বাড়িতে কৌশলে তারা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে।
ঘটনার সঠিক তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু
অপরদিকে জমি বিক্রেতা এজাহার মিয়ার পুত্র মকবুল আহমদ ও তার কন্যা ছেনুয়ারা বেগম বিক্রিত জমির লোভে উক্ত অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেটের আদালতে, কক্সবাজার এমআর মামলা নং- ৫০৯/২০২২ কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করে। স্বারক নং- ৯৯১/২০২২/এডিএম তারিখ-২১-০৩-২০২২ ইং।
উক্ত আদেশ মতে ইউপি মেম্বার রেজাউল করি রেজু জানান, কুদ্দুস মিস্ত্রি ও অভিযুক্তদের মাঝে দীর্ঘদিন জমি বিরোধ চলছে।
প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তারাই (প্রতিপক্ষরা) জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে বসত বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আশংকা করা যায়।
আরও পড়ুন: শহীদ আজাদের মায়ের নির্মম গল্প
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি হাফেজ উল্লাহকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং অন্যান্য পলাতক আসামিদের আটক করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী জানান, বিষয়টি আমি অবগত নয়। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য জরুরি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
সান নিউজ/এমকেএইচ