শফিক স্বপন, মাদারীপুর: মাদারীপুরের রাজৈরে পুরোপুরি খাল খনন না করেই বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির খাল খনন কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। খালটির অর্ধেক খনন করায় এটি কোন কাজেই আসছে না। এতে একদিকে চাষাবাদে পানি সংকট ও অন্যদিকে কৃষিপণ্য আনা নেয়ায় ভোগান্তি হওয়ায় ক্ষুব্ধ চাষীরা। যদিও বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ এলজিইডি বলছে, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে গান শুনাতে চান জববার
মাদারীপুর এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি’র) অর্থায়নে ২০২০-২১ অর্থ বছরে মাদারীপুরের রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে কৃষকদের সেচ সুবিধার প্রয়োজনে দুটি খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। ইউনিয়নের ‘বুলগি’র বিলের দেড় কিলোমিটার ও কমলাপুর খালের আড়াই কিলোমিটার খাল খনন করার কথা। কিন্তু খাল দু’টির কাজ অসমাপ্ত রেখেই ৩০ লাখ টাকা বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন খালটি পুরোপুরি খনন করেনি। পুরো খনন করা হলে সরকারের খাল খনন কর্মসূচির সুবিধা পেত এই অঞ্চলের মানুষেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা বিনয় কৃষ্ণ রায় বলেন, ‘আমাদের কমলাপুরের খালটি গত বছর সরকারিভাবে খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু খালটি পুরোটা খনন না করেই ফেলে রাখা হয়েছে। খালটি যদি পুরোপুরি খনন করা হতো, তাহলে এই এলাকার মানুষেরা অনেক সুবিধা পাইতো।
একই এলাকার সুখচান সাহা বলেন, ‘খালটি গত বছরে খনন কাজ শুরু করে। কিছু জায়গায় খনন করে রেখে দেয়। কিন্তু তারপর আর খনন করেনি। খালটি সুন্দরভাবে খনন করে দুইপাড়ে রাস্তা তৈরি করে দিলে আমাদের এলাকাবাসীর অনেক উপহার হবে।
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ
আরেক বাসিন্দা সৈকত সরকার বলেন, ‘খালটি উন্নতমানের করে খনন করার দাবি করছি। শুনেছি ঠিাকাদার কাজ সব না করেই পুরো বিল নিয়ে গেছে। সরকারি কর্মকর্তারা কিভাবে কাজ শেষ না করলেও পুরো কাজের বিল দিয়ে দেয়। আমাদের মাথায় কাজ করে না। রাষ্ট্রের টাকার এমন অপচয়। আমরা দাবি করছি। খালটি আরও ভালভাবে খনন করে দুই পাড়ে রাস্তা তৈরি করুক। যাতে সবাই চলাচল করতে পারে। আবার খালের সুবিধাও পেতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই খালটির খনন কাজের ঠিকাদার ছিল ইলিয়াস হাওলাদার। তিনি এবারে বাজিতপুর ইউনিয়নে চামচ প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচন করে হেরে গেছেন। এলাকায় তার প্রভাবও রয়েছে। তাই হিন্দু অধ্যুষিত এই এলাকার প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে না করেই বিল নিয়ে গেছে। এই অঞ্চলের শতকরা একশ ভাগই মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিধায় সে এই অনিয়ম করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। কারণ এখানে কেউ প্রতিবাদ করার লোক নেই।
আরও পড়ুন: কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নের খাল দুটি পুরোপুরি খনন না করার কারণে একদিকে চাষাবাদে পানি সংকট হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষিপণ্য আনা-নেয়ায় চরম ভোগান্তিতে কৃষকরা। খাল দুটি পুরো
খনন করা হলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মাছের খাটতি পুরনের পাশাপাশি এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে বলে আশা এলাকাবাসীর। তাই এই প্রকল্পে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে তার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি।
আরও পড়ুন: উলিপুরে মাদরাসায় হামলার অভিযোগ
রাজৈর উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে বাজিতপুর ইউনিয়নের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির খাল খনন কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হাওলাদারের যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, আমি সঠিকভাবে কাজ করেছি। তাই বিল নিয়েছি। আপনি এই কথা লিখে দেন।
সান নিউজ/এমকেএইচ