রহমত উল্লাহ, টেকনাফ (কক্সবাজার): মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়া টেকনাফের ১৮ জেলে পরিবারের অন্তহীন আহাজারিতে সাবরাং ইউনিয়নের জালিয়া পাড়া নাফ নদী সংলগ্ন গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। জেলেদের জীবন নিয়ে দোলাচলে থাকা স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কোনো ভাষাই যেন যথেষ্ট নয়। অনবরত কান্নায় স্বজনদের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। কেউ গেলে শুধু তাকিয়ে থাকেন। কখনও কখনও নিঃশব্দ কান্না বুকফাটা আর্তনাদ হয়ে বাতাস ভারি করে তোলে।
আরও পড়ুন: সার কারখানায় নাটের দাম ১ কোটি!
শনিবার (১৯ মার্চ) সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার ১৮ জেলেদের বাড়িতে গেলে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। চোখ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে, তখন জহুরা খাতুন বলেন , আমার দুই সন্তান মাছ শিকার করে ফেরার পথে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। দুই সন্তান সোলতান ও রশিদ আহমদ ফিরে আসার অপেক্ষায় অশ্রুভেজা চোখে নাফ নদী পাড়ে চেয়ে আছেন জহুরা বেগম। বুকফাটা কান্নায় আরো বলেন, কি খাচ্ছেন আমার দুই সন্তান, কবে ফিরবেন আল্লাহ বার্মার পুলিশের অন্তরে হেদায়েত দান কর বলে চিৎকার করেন।
জেলে হেলালের ভাই মো. আয়াছ বলেন, এখন একমাত্র বুকের ধন ও সংসারের বোঝা বইবার অবলম্বন হারানোর শঙ্কায় আমার মা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সাগর থেকে কোন ট্রলার ফিরে আসার শব্দ পেলেই ছুটে যান সাগর মোহনা কিংবা নদীর তীরে। শুধু হেলালের মা নয় শাহপরীরদ্বীপ জালিয়া পাড়ার ১৮ জেলে পরিবারের কথা কেন? এখনও ফিরে আসেনি।
১৮ জেলের স্বজনরা খুবই আতঙ্কের মধ্য আছেন। তারা বর্তমান কেমন পরিস্থিতিতে আছেন কেউ কিছু বলতে পারছে না। তাছাড়া অনেক সময় সাগর থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার বিজিপি। অনেক সময় মুক্তিপণ দিয়ে ফেরে আবার অনেক সময় জেলেও পাঠায়। দের মধ্যে ১১ বছরের আরাফাত নামের একটি শিশু রয়েছে। আরাফাত কখন ফিরবে এ আশায় কাটছে মা রেহেনা বেগমের।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র
১১ বছরের শিশু আরাফাতের বাড়িতে দেখা যায় মা রেহেনা বেগম আর্তনাদে ভেঙে পড়েন। আমার সোনামনি আরাফাত কোথায় আছে, কেমন আছেন তাও তার জানা নেই। তাই হতাশ হয়ে তখন নাফ নদী পাড় থেকে বাড়ি ফিরেছেন।
গত (১৫ মার্চ) মঙ্গলবার শাহপরীর দ্বীপের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগর থেকে ১৮ বাংলাদেশির চারটি নৌকাসহ ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)।চারদিন পর্যন্ত আটক বাংলাদেশিদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপি।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড় আ’লীগের নেতৃত্বে সুজন-সম্রাট
১৮ জেলেকে ফেরতের বিষয়ে এ পর্যন্ত মিয়ানমার বিজিপি কোনও চিঠির জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার। তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এর আগেও, জেলেদের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা রিপ্লাই দিচ্ছে না।
মিয়ানমার বিজিপির ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের মধ্যে রয়েছেন- টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার মো. রমজান, মো. জামাল, মোহাম্মদ জসিম, রশিদ ইসলাম, মো. ফয়সাল, মো. আকবর, নজিম উল্লাহ, মো. রফিক, আবু তাহের, মো. হোসেন, হাসমত, মো. সাব্বির, মো. সুলতান, মো. ইসহাক, আবদুর রহমান, নুর কালাম, রেজাউল করিম ও মো. হেলাল এরাই সবাই শাহপরীরদ্বীপ জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় ৬ জনের লাশ উদ্ধার
নাফ নদীর স্থানীয় জেলেরা জানান, কালাম, মো. ইসলাম ও নুর কালামের মালিকানাধীন চারটি নৌকায় ১৮ মাঝিমাল্লা সাগরে মাছ শিকারে যায়। মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে শাহপরীর দ্বীপের কাছাকাছি নাইক্ষ্যংদিয়ার এলাকায় কাঠবোঝাই ট্রলার দেখতে পান। এ সময় জেলেরা ডুবে যাওয়া ট্রলারের উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। পরে তারা ফিরে আসার সময় মিয়ানমার বিজিপি স্পিড বোটে এসে তাদের ধাওয়া করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়। তিন দিন পরও তাদের ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনও সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে আটক জেলেদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করা হয়েছে। পরিবারগুলোকে আর্থিক অনুদানসহ খাদ্রসামগ্রী সরবরাহ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এছড়া তাদের দ্রুত ফেরত আনার বিষয়ে বিজিবি কাজ করছে বলে জানান তিনি।
সান নিউজ/এমকেএইচ