আমিরুল হক, নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের ডালিয়া নদী খননের নামে মাটি লুটের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের ক্যানেল এলাকায় মাটি ‘লুট’ বন্ধের দাবিতে তারা বিক্ষোভও করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সৈয়দপুর ও তারাগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ডালিয়া নদী পুনঃখননের কাজ চলছে।
জানা গেছে, এই কাজটি পেয়েছে দিনাজপুরের মেসার্স মুফাদ কর্পোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২৫ কিলোমিটার উভয় দিকে ডাইক শক্তিশালীকরণের খরচ ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ থাকার পরও খননের নামে খননযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে মাটি তুলে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে।
বিক্ষোভকারী ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা লিটন খান বলেন, চলমান খনন কাজের উদ্দেশ্য ক্যানেলের উভয় পাড় শক্তিশালী করা। যাতে আগামী বর্ষায় পাড় ভেঙে পানি গড়িয়ে আবাদী জমি ও জনবসতি বন্যা কবলিত না হয়। অথচ খননকৃত মাটি এই এলাকা বাদ দিয়ে ক্যানেলের অন্যত্র নিচু পাড়ে দেয়ার নামে বাইরে বিক্রি করছে ঠিকাদার।
আরও পড়ুন: প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবা যাবে না
বিগত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শামসুল আলম সরকার বলেন, ঠিকাদার মূলতঃ প্রকল্পের সিডিউল বহির্ভূতভাবে ক্যানেলের মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মাটি পরিবহনে ট্রলি ভাড়া দেয়ার সুবিধা দেয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাদা সরকার এই অবৈধ কাজ বাধা না দিয়ে উল্টো সহযোগিতা করছেন। অথচ বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে অসংখ্য রাস্তা, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ নিচু, খানাখন্দে ভরা। মাটির অভাবে এগুলো মেরামত না করায় জনগণ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ডালিয়া ক্যানেলের বগুড়া সেচ প্রকল্পের এই বর্ধিতাংশ বাস্তবায়নে এলাকার শত শত লোকের হাজার হাজার একর জমি, ঘর বাড়ি, বাগান দোকান চলে গেছে। সেই মাটি কেটে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের পরিবর্তে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বিক্রির মাধ্যমে গুটি কয়েক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী অর্থ পকেটস্থ করে অন্যায়ভাবে লাভবান হবে, তা আমরা হতে দিতে পারি না। তাই এলাকার সচেতন মহল এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি।
আরও পড়ুন: ছাত্রীকে গণধর্ষণে ৬ জনের স্বীকারোক্তি
জানতে চাইলে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডা. মো. শাহাজাদা সরকার বলেন, সিডিউল মত এখান থেকে মাটি কেটে নিয়ে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ধোপাঘাট এলাকায় ক্যানেলের পাড়ে দেয়া হচ্ছে। মাটি বিক্রি বিষয়ে আমার জানা নেই। এলাকার কেউ কোন অভিযোগও করেনি। খননকাজ বন্ধ করার কথাও জানি না। অনিয়ম হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. আরমান সরকার মাটি লুটের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ক্যানেল থেকে মাটি কেটে প্রকল্পের কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু অসাধু লোক সুবিধা নিতে স্থানীয়দের ভুল বুঝিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা বেড়েছে ৩ গুণ
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, মাটি বিক্রির কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি করে থাকে, তা ধরিয়ে দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা যেই হোক। কিন্তু এভাবে কাজ বন্ধ করলে এলাকারই ক্ষতি।
সান নিউজ/এমকেএইচ