নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় কাগজে মোড়ানো শহীদ মিনারে বিনম্র শ্রদ্ধা জানায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকার কারণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শিক্ষার্থীরা কলা গাছ, বাঁশ, কাঠ, আর কাগজ-কাপড়ে তৈরি করা অস্থায়ী শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গতকাল রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের উত্তর ফুরশাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কাগজে মোড়ানো শহীদ মিনার নির্মাণ করতে দেখা গেছে।
জানা যায়, ১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলায় আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার লক্ষ্যে সালাম, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে ছিলেন। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের মাতৃভাষার অধিকার।
পৃথিবীতে বাঙ্গালী একমাত্র জাতি, যে জাতি মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন করেছে। রক্ত দিয়েছে , অসংখ্য শহীদ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, সেই জাতি বাঙ্গালী। এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয় এবং শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষা সৈনিক বীরদের সম্মান জানানো হয়।
আরও পড়ুন: শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
গৌরবময় সেই ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো উপজেলার ১২৮টি সরকারী প্রাথমিক ব্যিালয়ের মধ্যে ৪০ টিতে রয়েছে শহীদ মিনার। ৮৮ টি সরকারী প্রাথমিক ব্যিালয়ের নেই। এ কারণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উপজেলার এই ৮৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলা গাছ, বাঁশ, কাঠ, আর কাগজ-কাপড়ে তৈরি করা অস্থায়ী শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১২৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে মাত্র ৪০টিতে, বাকি ৮৮ টি বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই।
ভূইরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মো.জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ‘দেশ এখন ডিজিটাল হয়েছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাচ্ছে না কোনো স্থায়ী শহীদ মিনার। আর মাতৃভাষা দিবস এলে তারা বাঁশের কঞ্চি কিংবা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে দিবসটি পালন করে।’
বিক্রমপুর আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো.ওয়াহিদুর রহমান খান বলেন, ‘বাঙালি চেতনা ও আমাদের জাতিসত্তার প্রথম উন্মেষ ঘটে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ভাষা শহীদদের প্রতি যথার্থ মর্যাদা দিতে হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘শহীদ মিনার তৈরির জন্য আমরা সব সময় স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করে আসছি। বর্তমানে তাদের সহযোগিতায় অনেক শহীদ মিনার হচ্ছে। আশা করছি, খুব শিগগির পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার হবে।’
সান নিউজ/এনকে