মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রিকাবীবাজার খালের অবশেষে অস্তিত্ব উদ্ধার ও প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯ টা থেকে জেলা প্রশাসকের নিয়োগকৃত ১১ জন সার্ভেয়ার খালের সীমানা নির্ধারণে কাজ করছেন। দখল উচ্ছেদ করতে চিহ্নিত করা হচ্ছে স্থাপনা। এতে নেতৃত্ব ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার।
জানা যায়, মিরকাদিম পৌরসভায় রিকাবীবাজার খালটির দৈর্ঘ এক কিলোমিটারেরও বেশি। এটি প্রায় দুইশ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি খান। ধলেশ্বরী নদীর কাঠপট্টি ঘাট থেকে এই খালের উৎপত্তি হয়। পৌরসভার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রিকাবীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ইছামতী নদীতে যুক্ত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এই খাল দিয়ে ‘প্রাচ্যের কলকাতা’ বলে পরিচিত কমলাঘাট নৌ-বন্দরে বড় বড় নৌকা দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হতো। চলত লঞ্চও। এই খালের পানি এক সময় স্থানীয়রা পান করত। গোসলও করত। রান্না-বান্নাসহ গৃহস্থলির সব ধরনের কাজ করা যেত। বর্ষার সময় পানিতে থৈথৈ করত। বর্তমান জেলা প্রশাসন খাল উদ্ধারে উদ্যােগ নেওয়ায় আমরা আনন্দিত।
মিরকাদিম পৌর মেয়র আব্দুস সালাম বলেন, অবশেষে খালটি আগের অবস্থায় ফিরে আসছে, এতে আমরা পৌরবাসী সবাই আনন্দিত। পৌরসভার ময়লা ফেলার জায়গা না থাকায় দীর্ঘদিন খালে ময়লা ফেলা হয়েছে। পৌরসভার ময়লা ব্যবস্থাপনার জন্য সুধারচর এলাকায় নতুন জায়গা তৈরি করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুল হাসান মারুফ বলেন, দুপুর পৌনে একটা পর্যন্ত খালের দক্ষিণ অংশটি পরিমাপ করা হয়েছে। খালের অন্য পাশের পরিমাপও করা হবে।
আরও পড়ুন: বিএনপি ভোট চুরি-গুজবে চ্যাম্পিয়ন
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের নির্দেশে খালের অবস্থা সরেজমিন করি। পর দিন থেকে খালের দু’পাশে অবৈধভাবে দখল করা দোকান, স্থাপনা স্বেচ্ছায় সরিয়ে নিতে পর পর তিনবার মাইকিং করা হয়।
আরও বলেন, গতকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে সময় দেওয়া হয়েছিল। খালটির সীমা নির্ধারণের জন্য জেলা প্রশাসক ১১ জন সার্ভেয়ার নিয়োগ দিয়েছেন। অবৈধভাবে দখলদার চিহ্নত করা হচ্ছে। রোববার সকাল নয়টার পর থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: আ’লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রসাশক কাজি নাহিদ রসুল বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসসহ সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা খাল উদ্ধারে খুব আন্তরিক। সাংসদ আর্থিকভাবে সহযোগিতার করার আশ্বাস দিয়েছে। এবার যে কোনভাবেই হোক খাল উদ্ধার করা হবে। খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। পুনরায় যেন দখল না হয়, সে জন্য খালের সীমানা নির্ধারণ করে মানুষ হাঁটাচলার জন্য রাস্তা করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১২ সালে খালটি দখলমুক্ত ও পুনঃখননের দাবিতে মানববন্ধন, গণসাক্ষর সংগ্রহ, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, খালের প্রান্তে অবস্থান ও প্রতিবাদ সভাসহ বহু কর্মসূচি পালন করা হয়।
সান নিউজ/এমকেএইচ