নিজস্ব প্রতিনিধি:
একাত্তরের রণাঙ্গনের অকুতোভয় যোদ্ধা বীর প্রতীক বদিউজ্জামান টুনু আর নেই। রোববার (২১ জুন) দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
সোমবার (২২ জুন) বাদ জোহর লক্ষ্মীপুর শাহী জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যসহ স্থানীয়রা তার জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে স্থানীয় হেতমখাঁ গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান টুনুর পৈত্রিক বাড়ি রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর ঝাউতলা মোড়ে। এ বাড়িতেই তিনি থাকতেন। রাজশাহীর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবি আরিফুল হক কুমারের চাচা শ্বশুর তিনি।
আরিফুল হক কুমার তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন বদিউজ্জামান টুনু। বেশকিছু দিন আগে তার পা ভেঙে গিয়েছিল। এছাড়া বার্ধক্যজনিত সমস্যা তো ছিলই। সপ্তাহখানেক আগে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এরপর তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল। শনিবার তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রায় দুই বছর আগে বদিউজ্জামান টুনুর স্ত্রী ফিরোজা বেগম মারা গেছেন। তাদের দুই ছেলে এবং তিন মেয়ে রয়েছেন। এদের মধ্যে এক ছেলে কানাডায় ও এক মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। অন্য দুই মেয়ে থাকেন ঢাকায়। আর এক ছেলে থাকেন লক্ষ্মীপুরের ঝাউতলার বাসায়। তার মৃত্যুতে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা যায়, বদিউজ্জামান টুনু ১৯৭১ সালে একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ৪২ বছর। ওই বয়সেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। ভারতে গিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। গেরিলাযুদ্ধের পাশাপাশি সম্মুখযুদ্ধও করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বদিউজ্জামান টুনু বীর প্রতীক খেতাব পান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বদিউজ্জামান টুনুর বড় ভাইয়ের দুই ছেলে, ছোট ভাই, ভগ্নিপতি ও ভাগনি জামাই নজমুল হককে হত্যা করে। নজমুল হক পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) ছিলেন।