নিজস্ব প্রতিনিধি:
চাঁদপুর শহরে যাত্রীর ফেলে যাওয়া ৬১ লাখ টাকা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন এক অটোরিকশাচালক। ১৫ বছর বয়সী সবুজ নামের ওই কিশোরের সততায় মুগ্ধ হয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মাহবুবুর রহমানসহ অনেকেই। সততার পুরস্কার স্বরূপ তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন এসপি এবং মালিককে টাকাগুলো বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ জানায়, রবিবার (২১ জুন) জেলা শহরের এক বিকাশ এজেন্ট তার কর্মীকে দিয়ে ইউসিবিএল ব্যাংকের স্থানীয় একটি শাখা থেকে ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। যাওয়ার পথে অটোরিকশায় সেই টাকা ফেলে যান কর্মী। এরপর টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য অটোচালক টাকাগুলো নিয়ে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কেউ না আসায় তিনি চলে যান পুরানবাজারের গ্যারেজে। এদিকে ওই বিকাশ এজেন্ট বিষয়টি পুলিশকে জানান।
পুলিশ সুপার তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘রবিবার (২১ জুন) দুপুরে একটি ফোন আসে। আমাকে বলা হয় চাঁদপুর জেলার প্রধান বিকাশ এজেন্টের ৬১ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। তারপর বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে শুরু করি। কিন্তু অবাক করে দেয় একটি ফোন কল। ফোনে আমাকে বলা হয়—স্যার, পুলিশ পাঠান, একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। ফোনে আমাকে জানানো হয়, একজন অটোচালক ও টাকার ব্যাগ এখন চাঁদপুর সদর থানায়। সাংবাদিকদের সামনে ব্যাগ খোলার পর ৬১ লাখ টাকার পুরোটাই পাওয়া যায় এবং বিকাশ এজেন্টকে পুরো টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’
তিনি আরও লেখেন, 'অটোচালক টাকার ব্যাগ বুঝতে পেরে, ভয় পেয়ে যে গ্যারেজে সিএনজি রাখেন, সেই গ্যারেজের অন্য আরেকজনকে দিয়ে পুলিশকে মেসেজটি জানিয়েছিলেন। তার মতো লোক এখনও পৃথিবীতে আছে!'
পুলিশ সুপার বলেন, 'এ যেন অলৌকিক ব্যাপার। অটোচালকের সততায় মুগ্ধ আমরা।' তিনি বলেন, 'টাকাগুলো আসলে ছিনতাই হয়নি; মিসিং হয়েছিল। অটোতে রেখে চলে গিয়েছিলেন বিকাশ এজেন্টের কর্মী। অটোরিকশাচালক টাকা পাওয়ার পর পুলিশকে জানায়। পরে আমরা গিয়ে টাকাগুলো পেয়েছি।'
উল্লেখ্য, রবিবার (২১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় বিকাশ এজেন্ট কর্মী মাসুদ হোসেন শহরের ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ৬১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংক থেকে নেমে ব্যাগভর্তি সেই টাকা নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় উঠে শহরের জোড় পুকুরপাড় এলাকায় এসে নামেন মাসুদ। কিন্তু ভুলক্রমে অটোরিকশাতেই টাকাগুলো রেখে নেমে যান তিনি। সেখানে বিকাশের এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে মাসুদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এরপর তারা দুই জন ফরিদগঞ্জে কাজে চলে যান। প্রায় আধঘণ্টা পর মাসুদ বুঝতে পারেন যে, টাকার ব্যাগটি তিনি অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন।