নিজস্ব প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নারীসহ ৬জন আহত হয়েছেন। হামলায় দুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো ইউনিয়নজুড়ে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। বিশৃঙ্খলা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজশাহী রেফার করেছেন।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নে দুই দফায় এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শুকুর আলী ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (বিদ্রোহী) মিজানুর রহমান টিপুর সমর্থকদের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।
নৌকা প্রতীকের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর আহত দুই সমর্থক হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার হাতেম আলী ছেলে হোসেন আলী (৫০) এবং একই এলাকার আছের উদ্দিনের ছেলে শামীম (৩০)।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর আহত চার সমর্থক হলেন, তিতুদহ ইউনিয়নের ৬২ আড়িয়া গ্রামের বসতিপাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের দুই ছেলে আওলাদ হোসেন (৫৫), জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০), জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪০) ও একই এলাকার আহাদ আলীর ছেলে শিমুল (১৮)।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে ১১ হাজারের বেশি প্রাণহানি
সহিংসতার খবর পেয়ে দর্শনা থানা ও তিতুদহ ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি ধারালো অস্ত্র (হাসুয়া), দুটি মোটরসাইকেল ও একটি অবৈধ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত আলমসাধু জব্দ করেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ৮টার দিকে দুটি মোটরসাইকেল ও একটি আলমসাধুযোগে ১০-১৫ জন হামলাকারী ৬২ আড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীরের বাড়িতে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় জাহাঙ্গীরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। হামলাকারীরা জাহাঙ্গীরের ভাই ও স্ত্রীকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এ সময় প্রতিবেশী শিমুল প্রতিবাদ করলে তাকেও বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে।
আরও পড়ুন: লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা
আহতদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এলে হামলাকারীরা সটকে পড়ে। পরে এলাকাবাসী ধাওয়া দিলে বাকিরা পালাতে পারলেও ধরা পড়ে হোসেন আলী ও শামীম। পরে তাদের দুইজনকে আটক করে উত্তমমধ্যম দেয় স্থানীয়রা। এ সময় হোসেনকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে এলাকাবাসী।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শুকুর আলী বলেন, আমার কোনো সমর্থক হামলার সাথে জড়িত নয়। আমার দলে কোনো উচ্ছৃঙ্খল লোকজনের জায়গা নেই। যদি কেউ এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তার নিন্দা জানাই। প্রকৃত হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (বিদ্রোহী) মিজানুর রহমান টিপুর মুঠোফোনে কল করে বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ শুরু
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার কুদরত এ খোদা বলেন, আহত জাহাঙ্গীরের ক্ষতস্থানে ১৫ থেকে ২০টি এবং হোসেনের ক্ষতস্থানে ১০-১৫টি সেলাই দেয়া হয়েছে। বাকিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল কবির বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় উভয়পক্ষের দুজনকে কুপিয়ে ও চারজনকে পিটিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সান নিউজ/এমকেএইচ