নিজস্ব প্রতিনিধি:
কক্সবাজারে ক্যাম্প ছাড়িয়ে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, পটুয়াখালীসহ ৫০ জেলায় এসব রোহিঙ্গা এখন ছড়িয়ে গেছে। বলছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
শরণার্থীদের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে পুরো কক্সবাজার। তিন বছর ধরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ভার সইতে গিয়ে এ জেলা হারিয়েছে নয়নাভিরাম পরিবেশ, বন-জঙ্গল, হাতির আবাসস্থলসহ অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ। উটকো ঝামেলা হিসেবে বেড়েছে এলাকায় চুরি, ছিনতাই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে দিন দিন বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে এসব শিবিরের রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ, নিরাপত্তা ও উগ্রপন্থী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়া ঠেকানো নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন উদ্বিগ্ন! এর ওপর বাড়ছে করেনাভাইরাসের সংক্রমণ। ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসে তাই এবার ক্যাম্পে কোনও ধরনের আয়োজন করা হয়নি।
রাখাইন থেকে বাংলাদেশে নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল নামে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। এরপর থেকে সাত লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ঠাঁই নেয় বাংলাদেশে। আগে থেকেই এ দেশে ছিল বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা। মিয়ানমার তাদের ফেরত নিতে না চাওয়ায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, টেকনাফ ও উখিয়া মিলে বর্তমানে চার দফায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়, বন ও জঙ্গল কেটে ৩৪টি শরাণার্থী শিবিরে আশ্রয়স্থল গড়ে তুলেছেন। তবে এখন যেন উখিয়া ও টেকনাফের সর্বত্র শরণার্থী শিবির। এ দুই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ৫ লাখের মতো। দিন যতই গড়াচ্ছে, রোহিঙ্গা শিবিরে বাড়ছে অস্থিরতা।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয় গ্রুপ আইএসসিজির কর্মকর্তা সৈকত বিশ্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশে ৮ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধন হয়েছে। বিশেষ করে করোনা সময়ে আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা মহামারি কিভাবে রক্ষা করা যায় সেটিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এটা সত্যি যে দিন দিন রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। এতে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমরা আশাবাদী দাতা সংস্থাগুলো মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’
১৫ বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকার পর গত ২৪ শে নভেম্বর ২০১৭ তারিখে একটি নতুন সমঝোতা স্মারকে একমত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তিতে দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনও রোহিঙ্গা রাখাইনে ফেরত যেতে পারেননি। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তিন দফায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে গেছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। এসময় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। কিন্তু মিয়ানমার আগ্রহী না হওয়ায় এখনও শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন।
এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিক অপরাধী গ্রুপ সক্রিয় হয়েছে। এতে নিরাপত্তা ও উগ্রপন্থী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়া ঠেকানো নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সূত্র মতে, গত তিন বছরের কাছাকাছি সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদক। পাশপাশি মানব পাচার, অপহরণ ও ডাকাতির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে ক্যাম্পে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা শিবির থেকে বের হয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টাকালে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত আনা হয়েছে।
কক্সবাজার পুলিশ বলছে, ‘ক্যাম্পে দিন দিন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সেখানে অপরাধ ঠেকাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।’