নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ার প্রবণতার মধ্যেই ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তা নদীর পানি বিপত্সীমা ছুঁইছুঁই করছে। হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল।
কুড়িগ্রাম : টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে অর্ধশত চরের পাট, ভুট্টা, সবজিক্ষেত, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে চরবাসী। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমারে সাত সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রে ২৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, চলতি মাসের শেষ দিকে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নদ-নদীর পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বন্যা দেখা দিতে পারে।
নীলফামারী : তিস্তা নদীর পানি বিপত্সীমা ছুঁইছুঁই করছে। গতকাল সকাল ৬টায় জেলার ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপত্সীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, 'গত কয়েক দিনের তুলনায় শুক্রবার (১৯ জুন) ভোরে তিস্তার পানি অনেক বেশি বেড়েছে।' একই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, 'পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তাপারের মানুষ বন্যার আশঙ্কা করছে।' ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, 'বন্যার আশঙ্কা থাকায় আমরা সতর্কাবস্থায় আছি।'
সিরাজগঞ্জ : বর্ষার শুরুতেই সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি আকস্মিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। যমুনা নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধি আর দফায় দফায় ভারি বর্ষণে আগাম বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির হার গত ৩২ বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপত্সীমার ১.৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ নদী করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতী, হুরাসাগর, বড়াল, বিলসূর্য, গুমানীসহ বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বেড়েছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুল হক জানান, চরাঞ্চলের ৯০ একর জমির পাট, ৫০ একর জমির তিল সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া টানা বৃষ্টির ফলে ৫৮০ একর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে অনেক জমির পাকা ধান। তা ছাড়া শাহজাদপুর ও চৌহালীতে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী, জালালপুর ও সোনাতনী ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। তা ছাড়া ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ খাস পুকুরিয়া ও বাগুটিয়া ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রাম।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর যমুনায় সর্বোচ্চ পানি রেকর্ড করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে।
সান নিউজ/ আরএইচ