কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের উলিপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীন ও আশ্রয়হীনদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর পেয়েছেন স্বচ্ছল ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। এছাড়াও শিক্ষার্থী, অবিবাহিত যুবক ও একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি পেয়েছেন সরকারি ঘর। এজন্য গুনতে হয়েছে তাদের ২৫-৩০ হাজার টাকা। ঘর বরাদ্দ পেলেও থাকেন না কেউ ওসব ঘরে। ফলে সরকারের একটি মহৎ উদ্দেশ্য কোন কাজেই আসছে না।
জানা গেছে, এ উপজেলায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য ১৫০ টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। ‘কথ শ্রেণির এসব সেমি পাকা ঘর নির্মাণে ব্য়য় ধরা হয়েছে ২কোটি ৮৫ লাখ টাকা। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে আশ্রয়হীন ও ভূমিহীন পরিবার গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা থাকলেও সেসবের কিছুই মানা হয়নি। এতে বঞ্চিত হয়েছেন হত-দরিদ্ররা।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে উপ-নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে শিশুরা
সরেজমিনে মঙ্গলবার উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়। ওই ইউনিয়নের নন্দু নেফরা গ্রামের শাহাজান আলী ২৫-২৮ ফুটের একটি আধা পাকা ঘরের মালিক তিনি। শাহাজাহানের সহোদর মেসবাউল ও পেয়েছেন প্রকল্পের ঘর। শাহাজাহন ও মেসবাউল সরকারি ঘর পেলেও সেখানে থাকেন না তারা। সেই ঘরে রাখা হয়েছে, ছাগল ও শুকনো খড়। তবে ১৩৮ নং তালিকায় থাকা শাহাজাহানের পিতা আব্দুল আজিজের নাম দেখা গেলেও তাকে দেয়া হয়নি ঘর। আজিজের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, তহশীলদারকে প্রত্যেকটা ঘরের জন্য ৩০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণের সময় সিমেন্ট ও লোহার অ্যাঙ্গেল কিনে দিতে হয়েছে। আমার ছেলে দুটি ঘর পেলেও আমাদেরকে তারা ঘর দেয় নি। কবে দিবে সেটাও জানিনা।
একই গ্রামের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বাইজিদ পেয়েছেন সরকারি ঘর। তালিকায় তার পিতার নাম মাহাবুর আলশ লেখা হলেও প্রকৃত নাম মাহাবুব আলম। ১৩৩ নং ক্রমিকে মাহবুব আলমও পেয়েছেন একটি ঘর। তার স্ত্রী আরজিনা বেগম বলেন, আগে জমি জমা থাকলেও এখন নেই। ঘর নির্মাণের সময় ৩৭ বস্তা সিমেন্ট দিয়েছেন তারা।
নন্দু নেফরা গ্রামের জোবেদ আলীর গোয়াল বাড়িতে উঠেছে দুটি আশ্রয়ণের ঘর। সেখানে খড়ের বড় স্তুপ গরুর খামারসহ নানান কৃষি উপকরণ থাকলেও প্রকল্পের ঘরে থাকেন না কেউ। জোবেদ আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগমের দাবি, একটি তার ভাতিজা নাজমুল ইসলামের ঘর অপরটি নিজের। কিন্তু প্রাথমিকভাবে বরাদ্দের তালিকায় তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এটা সম্ভব হয়েছে টাকার বিনিময়।
বরাদ্দের তালিকার সূত্র ধরে জানা গেছে, ওই গ্রামের ব্যবসায়ী রেজা আহমেদ, তার মা রেজিয়া বেগম, এনামুল হক, তার অবিবাহিত ছেলে জামিউল ও তার মা বাচ্চানী বেগম একই পন্থায় পেয়েছেন সরকারি ঘর। রেজা আহম্মেদের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ভাই এরশাদ আলী জানান, আমার মা এবং ভাই ঘর কিভাবে পেয়েছে সেটা জানিনা।
অভিযোগ রয়েছে, গুনাইগাছ ইউনিয়নের ভূমি সহকারি গণেশ চন্দ্র ঝাঁ এবং নন্দু নেফরা গ্রামের বাসিন্দা সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের ভূমি সহকারি আব্দুর রহমান যোগ-সাজশে ঘর দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজে ভিলেজ পলিটিক্সের স্বীকার আখ্যা দিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, গ্রামের কিছু লোক আমার নামে বদনাম করছে।
গুনাইগাছ ইউনিয়নের ভূমি সহকারি গণেশ চন্দ্র ঝাঁ তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘর দেয়া আমার কাজ নয়। টাকা আমি নিতেই পারিনা। তালিকায় নাম না থাকলেও ঘর পাওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারেননি।
ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদী বেষ্টিত উলিপুর উপজেলা। প্রতিবছর এ উপজেলায় নদী ভাঙণের শিকার হয়ে সহস্রাধিক মানুষ বাস্তুহারা হন। আর এসব মানুষের ঠাঁই হয় খোলা আকাশের নিচে কিংবা অন্যের এক টুকরো ভিটায়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই প্রকল্প ভূমিহীন ও আশ্রয়হীনদের পাওয়ার কথা থাকলেও এখানে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে আখের গুছিয়েছেন তহশীলদারসহ কিছু অসাদু কর্মকর্তা।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে টাকার বিনিময় স্বচ্ছল পরিবাররা প্রকল্পের ঘর পেলেও দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভুমি) আশরাফুল ইসলাম রাসেল বলেন, আমি ওই সময় প্রশিক্ষণে ছিলাম। যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই তালিকাগুলো করেছেন।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার বিপুল কুমারের কাছে জানতে চাইলে, বিষয়টি ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষ দেখছেন বলে জানান।
সান নিউজ/এনকে