সারাদেশ

ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ায় ভণ্ড কবিরাজের ১৪ বছর কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিনিধি, বড়াইগ্রাম, (নাটোর): কবিরাজি চিকিৎসার নামে দুই কিশোরীকে কৌশলে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় এক ভণ্ড কবিরাজের ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ৩টার দিকে রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়াউর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত আসামি পলাতক ছিলেন।

দণ্ডিত ব্যক্তির নাম আল-আমিন ওরফে কবিরাজ (৬০)। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চাঁন্দাই গ্রামের আব্দুল বারী ওরফে ঝোলন সরদারের ছেলে। ২০১৬ সালে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় যখন মামলাটি করা হয় তখন তার বয়স ছিল ৬০ বছর।

আরও পড়ুন: সাতক্ষীরা হাসপাতালের ‘বিশ্ব সেরা’ স্বীকৃতি অর্জন

জানা গেছে, কবিরাজির নামে তিনি গ্রামের নারীদের বিভিন্নভাবে যৌন নির্যা’তন ও হয়রানি করে আসছিলেন। তবে সবশেষ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় পৃথক মামলা হয়। এরপর থেকেই তিনি পলাতক। আজ (বুধবার) ৫৭ ধারার মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। ওই ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় নাটোরের নারী ও শিশু আদালতে অভিযুক্ত কবিরাজের বিরুদ্ধে আলাদা একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইসমত আরা। তিনি জানান, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর এই ঘটনাটি ঘটে। একই বছরের ১৫ নভেম্বর ১৩ বছরের আরেক কিশোরীকে কৌশলে কবিরাজি চিকিৎসার নামে ধর্ষণ করেন তিনি। দুজনকে ধর্ষণেরই ভিডিও করে রাখেন ওই কবিরাজ। ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানালে দুই কিশোরী মারা যাবে বলে তাদের ভয় দেখানো হত।

আরও পড়ুন: মৃত্যুর সঙ্গে কমেছে শনাক্ত ও শনাক্তের হার

বিষয়টি পরে প্রকাশ পাওয়ায় ভুক্তভোগী দুই কিশোরীর মধ্যে একজনের বাবা ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাদী হয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এই মামলা করেন।

মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, তার মেয়ের সঙ্গে স্থানীয় এক তরুণের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এতে তার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এই সুযোগে এলাকার ভণ্ড কবিরাজ তার মেয়েকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে বশে নেয়। তার কাছে কবিরাজি চিকিৎসা করলে আবারও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন বলে প্ররোচিত করেন। এ সময় তসলিমা খাতুন নামের স্থানীয় এক প্রতিবেশী নারীও জানায় এই কবিরাজ ঠিকই বলছেন।

আরও পড়ুন: বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১০

কবিরাজের কথামতো চিকিৎসা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। একপর্যায়ে তার মেয়েকে গোপনে বাড়িতে ডেকে নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসার নামে ধর্ষণ করেন এবং গোপনে মোবাইলে তার সেই ভিডিওধারণ করে রেখে দেন।

এরপর থেকে মাঝেমধ্যেই ওই কবিরাজ ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার মেয়ের সঙ্গে জোর করে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে আসছিল। কিন্তু প্রতারিত ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পরও ভিডিও ফাঁস হওয়ার ভয়ে তার মেয়ে মুখ খোলেনি।

এরপর তার মেয়ের এক বান্ধবীও কবিরাজের লালসার শিকার হয়। পরে ওই ভণ্ড কবিরাজ দুই কিশোরীকেই এক সঙ্গে তার ঘরে ডাকেন। কিন্তু অস্বীকৃতি জানানোয় কবিরাজ তার মেয়ে ও অপর কিশোরীর সেই গোপন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এরপরই পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনা জানতে পারেন। তখন দুই কিশোরীর মধ্যে একজনের বাবা বাদী হয়ে আকিল সরদারের বিরুদ্ধে বড়াইগ্রাম থানায় এই মামলা দায়ের করেন।

আরও পড়ুন: ইসি গঠনে আনা আইন অসম্পূর্ণ

তিনি আরও জানান, এ মামলায় তসলিমা খাতুনসহ দুজনই আসামি ছিলেন। তবে তদন্ত শেষে পুলিশ একজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। পরে মামলাটি নাটোর থেকে নিস্পত্তির জন্য রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে মামলার বাদী ও দুজন ভুক্তভোগীসহ মোট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এরপর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় ঘোষণা করা হয়।

অ্যাডভোকেট ইসমত আরা আরও জানান, রাজশাহীর আদালতে শুধু ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার বিচার হলো। ধর্ষণের জন্য মামলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারার অংশটির বিচার চলছে নাটোরের আদালতে। ওই অংশটুকুর রায় এখনও হয়নি। মামলা একটি হলেও ধারা আলাদা থাকার কারণে বিচার দুই আদালতে চলছে বলেও জানান তিনি।

সান নিউজ/এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

ইসলামী ব্যাংকের সাথে হাব-এর মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর উদ্যোগে হ...

সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছ...

ফের বাড়ল সোনার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বাজারে ফের সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা...

ফের হারলো সাকিবের দল

স্পোর্টস ডেস্ক : আবুধাবির টি-টেন টুর্নামেন্টে ফের হারের মুখ...

নোয়াখালীতে দুই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীতে পৃথক স্থান থেকে দুই গৃহবধূর...

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা