গিয়াস উদ্দিন রনি, নোয়াখালী: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতায় কয়েকটি নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরোনো সড়ক সংস্কার কাজে সিডিউল বহির্ভূতভাবে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারের জিওবি মেন্টেনেজ প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি বেগমগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চলছে এই নির্মাণকাজ। অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ছামিউল ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী আবদুল হামিদ রাজু। এর মধ্যে দুটি রাস্তা নির্মাণে একেবারে নিম্নমানের ইট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কের পাশে থাকা গাইড ওয়ালগুলোও একেবারে নিম্নমানের ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৪৬২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ প্রকল্প অনুমোদন
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার জমিরহাট থেকে কাদিরপুর ইউনিয়নের সাহেবের হাট অংশের সড়কের ২৩০০ মিটারের এই সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। এ ছাড়াও একই সময়ে ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের সুরুরগো পোল থেকে মালেকের দোকান ২২০০ মিটার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিডিউলের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো দুটি সড়কে নিম্নমানের কাজ করছেন ঠিকাদার। কাজের শুরু থেকেই তদারকি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি করে এসব অনিয়ম করে চলছে। এজেন্টে একেবারে নিম্নমানের ইট, খোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে একেবারে নিম্নমানের ইটের খোয়া, নিম্নমানের বালু। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে সড়কের কাজে বাঁধা দেন।
আরও পড়ুন: টাওয়ার হ্যামলেটসে ৫ বাঙালির নামে ভবন
তারপর এলাকাবাসী বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগকে মৌখিক ভাবে জানিয়েও ফল পায়নি। এরপরও খারাপ ইট দিয়ে রাস্তা করে দুটি সড়কই বর্তমানে পিচ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসাী বলছে, সামনে বর্ষায় সব উঠে যাবে। এত খারাপ রাস্তা করার কী দরকার?
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও সড়কের পাশের গাইড ওয়াল গুলো একেবারে যেনতেন ভাবে নিম্নমানের ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। অপরদিকে শ্রমিকেরা বলছেন, ঠিকাদার যে রকম ইট-বালু দিচ্ছেন, তা দিয়েই তাঁদের রাস্তা নির্মাণ করতে হচ্ছে। একাধিক শ্রমিক নিম্নমানের ইট ও ইটের খোয়া ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকারও করেন।
এ সময় স্থানীয়রা তদারকি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেন উচ্চ পর্যায় থেকে বেগমগঞ্জের সকল ইউনিয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নোয়াখালীর আওতায় বাস্তবায়িত কাজগুলো সঠিক ভাবে অন্তত একবার তদন্ত করা হোক। তাহলে অনেক অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে।
আরও পড়ুন: চালক স্টাফদের আল্টিমেটাম, দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি চলবে না ট্রেন
কারণ তদারকি প্রতিষ্ঠানের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরকারি সিডিউল অনুযায়ী উন্নয়ন কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। কারণ এর ঘাটে ঘাটে অনেক অনিয়মের গান আছে। এ দুটি সড়কের বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীকে তথ্য দিতে তালবাহানা করে সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আবদুল হামিদ রাজু নিম্নমানের ইট-বালু ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, রাস্তায় ইট-বালু ভালো মানের ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে যাদের কাছ থেকে এগুলো নেওয়া হচ্ছে, তারা তারা ভুলবশত মাঝে মধ্যে এক নম্বর ইটের মধ্যে কিছু খারাপ ইট দিয়েছে।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি সূচকে ১৪৭তম স্থানে বাংলাদেশ
বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী কাজী কামরুল ইসলাম একজন সহকারী প্রকৌশলীর বরাত দিয়ে দাবি করেন সড়কে নিম্নমানের কিছু খোয়া আছে। তবে সড়কে তেমন নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো.একরামুল হক বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার অভিযোগ পাওয়া গেলে নিম্নমানের উপকরণ সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এলাকাবাসী তার দাবি নাকচ করে দিয়ে দুষছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। তারা বলছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা থাকায় নিম্নমানের কাজ হয়। এটা রাষ্ট্রও জনগণের সাথে এক ধরনের প্রতারণা।
সান নিউজ/এমকেএইচ