গিয়াস উদ্দিন রনি, নোয়াখালী: গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর বারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত গেজেট প্রকাশ স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
পাশাপাশি কাশিপুর কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল ২ রকম কেন? তা কেন বাতিল হবে না মর্মে রুল জারি করেছে এবং নির্বাচন কমিশনারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপ্রতি জাফর আহম্মদ ও কাজী জিনাত হকের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ই জানুয়ারি ভুক্তভোগী জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইয়েদ আহমদ অভিযোগ করেন, ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ফলাফলের কাগজ অনুযায়ী তিনি ২৮০ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বারগাঁও ইউনিয়নে তার চশমা প্রতীকে ৪৮৭১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী সামছুল আলম পান ৪৫৯১ ভোট। এতে ২৮০ ভোট বেশী পেয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন তিনি। সন্ধ্যার পর থেকে উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার দফতরে ভোট কেন্দ্র থেকে একে একে সব ইউনিয়নের ফলাফল এসে পৌঁছে।
কিন্তু ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে নয়টি ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তার ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণায় গড়িমসি শুরু করে। একপর্যায়ে যুবলীগ আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিডিয়া কর্মীদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার এবিএম নোমানকে দিয়ে কাটা ছেড়াঁ করে ফলাফল পরিবর্তন করে। এতে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনি (চশমা) প্রতীকে পেয়েছেন ২১০ ভোট তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকায় প্রার্থী মো.সামছুল আলম পেয়েছেন ১২৭১ ভোট। অপর প্রার্থী আ.রাজ্জাক দুলাল মোটর সাইকেল তিনি পেয়েছেন ১৯৫ ভোট।
প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত তার এজেন্টকে দেয়া ফলাফল সিটে তা লেখা আছে। এ ফলাফল সিট আমার পোলিং এজেন্টদের মাধ্যমে রাত আটটার সময় হাতে পাই। কিন্তু প্রিজাইডিং অফিসার এবিএম নোমান ফলাফল সিট ওভারাইডিং করে কেটে ছিড়ে আমার চশমা প্রতিকে ২১০ ভোটের স্থানে ১১০, মোটর সাইকেলের প্রতীকে ১৯৫ ভোটের স্থানে ৯৫ ভোট। অপরদিকে নৌকার প্রাপ্ত ভোট ১২৭১ এর স্থানে ১৪৭১ লেখে জমা দেয়।
বেআইনিভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অম্বরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এ বি এম নোমান ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সোনাইমুড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. বরকত উল্যাহর যোগসাজশে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সকল প্রার্থীর ভোটকে কাঁটাছেড়া করে পরিবর্তন করে রাত সাড়ে দশটায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. সামছুল আলমের নৌকা প্রতীককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সাইয়্যেদ আহম্মদ অভিযোগ করেন, ফলাফল পাল্টে দেওয়ার বিষয়ে রিটানিং কর্মকর্তার কাছে তাৎক্ষণিক অভিযোগ করে কোন সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি। উল্টো রিটানিং কর্মকর্তা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণায় দৃঢ়তা দেখিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ভুক্তভোগী প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফল বাতিলের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে সাইয়্যেদ আহম্মদ হাইকোর্টে ৮ জানয়ারি একটি রিট দাখিল করেন। রিট নাম্বার ৮৩২/২০২২, পরে ১৮ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ১০ জনের উপর রুল জারিসহ আদেশ দেন। বাদী পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
সান নিউজ/এমকেএইচ