নিজস্ব প্রতিনিধি:
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর বলা হয়েছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এমন নির্দেশনাও জারি করেছিল। কিন্তু আম্পান আঘাত হানার ২৭ দিন অতিবাহিত হলেও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলাসহ কয়েকটি এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা। উপজেলা সদর ছাড়াও দয়ারঘাট, জেলেখালি কলাবাড়িয়া, চিরিউলার হাজলাখালি, প্রতাপনগরের চাকলা, কুড়িকাহনিয়া ও কুল্লার বিস্তৃর্ণ এলাকা এখনও পানির নিচে তলিয়ে আছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড (আরইবি) সূত্র বলছে, আশাশুনি উপজেলায় এখনও এক হাজার ১০০ মিটারে বিদ্যুৎ লাইন দিতে পারেনি আরইবি।
এই উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ এখনও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। বাঁধ ভেঙে যাবার কারণে বেশিরভাগ মানুষ আজও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করায় তাদের বাড়িঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনি বলে দাবি আরইবি’র।
আরইবি’র একজন ঊর্ধ্বতন কমর্কতা জানান, ওই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি। তবে আগামী ২/৩ দিনের মধ্যেই সব সংযোগ স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। যাতায়াতের অবস্থা খুবই খারাপ। ওই এলাকায় মিটার আছে প্রায় এক হাজার ১০০টি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশাশুনির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানান, ‘পানিবন্দি এলাকাগুলোতে আমরা এখনও বিদ্যুৎ দিতে পারিনি। এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুলে অবস্থান করছেন। বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। বাঁধ মেরামত করা না গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা বিপজ্জনক হবে।’
এদিকে, খুলনার কয়রা উপজেলার সাতটি গ্রামের আংশিক এলাকার মানুষ এখনও বিদ্যুৎ পাননি। এই গ্রামগুলো হচ্ছে— উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হাজতখালি, গাজিপাড়া ও কাঠমারচর এবং কয়রা সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা, ৩ নম্বর কয়রা, হরিণখোলা ও ঘাটাখালি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আম্পানের পর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ বিভাগকে জানিয়েছে, আরইবি’র দুই হাজার ৭০০ বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে,৭৬০টি ট্রান্সফরমার ও ১৯ হাজার মিটার পুড়ে গেছে। এছাড়া, ৩৩ হাজার ৬০০ জায়গায় সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে যায়। তবে আম্পান শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে বেশিরভাগ জায়গার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনও বাদ রয়ে গেছে আশাশুনি।
উপকূলের আরেক বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) সূত্র বলছে, তাদের সব এলাকাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। আম্পানের আঘাতে বিদ্যুৎ বিতরণকারী এই কোম্পানির ৭৮১টি পোল ভেঙে যায়, আর এক হাজার ৭১৬টি পোল হেলে পড়ে। মোট ৪৯০ কিলোমিটার লাইনের ক্যাবল ছিঁড়ে যায়। এছাড়া, ১১৪টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত ২০ মে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান।
সান নিউজ/ বি.এম.