মো. নাজির হোসেন: গত বছর অধিক আলু উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবছরও লাভের আশায় আগাম আলু চাষে ঝোঁকেন মুন্সীগঞ্জের আলুচাষিরা। কিন্তু এবার আগাম আলুর দাম কম থাকায় লোকসানের কবলে পড়েছেন তারা। গত বছর আলুচাষিরা প্রতি কেজি আলু মাঠেই বিক্রি করেছিলেন ২৫-৩০ টাকা দরে। এবার তা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ১০-১২ টাকায়। ফলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে আলুর দামের ফারাক বিস্তর। অসময়ে বৃষ্টির কারণে আগাম আলুর উৎপাদনও কম হয়েছে।
জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ চরমশুরার কাউয়াদী গ্রামের আবুল সরকার বলেন, গতবার যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে এবারও তেমনই আলু উৎপাদন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সামান্য ক্ষতি হয়েছে আগাম আলুর। তবে তা মানিয়ে নেওয়ার মতোই। কিন্তু স্বাভাবিক আমরা এ জেলার আলু আবাদ করি। তার ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। মনে আশা ছিল আগাম আলুতে কিছু ক্ষতি মুচন হবে। তা আর হলো না। আমাদের জেলায় আলু চাষের খরচ বেশি পড়ে। গতবার আলুর দাম পেলেও এবার আলুর দাম আমাদের কপালে নেই। সামনের দিনগুলো আরও ভয়াবহ হতে পারে।
গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক জসিম প্রধান বলেন, এবারের আলুর যা দাম তা হিসাব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘা জমিতে আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। বিঘায় আমাদের আলু উৎপাদন করতে খরচ হয় ২২-২৫ হাজার টাকা। কিন্তু আমরা আলুর দাম পাচ্ছি গড়ে ২০-২২ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত আমরা আলু চাষে লোকসানের মধ্যে আছি। বৃষ্টির কারণে আগাম আলু কম ফলেছে।
কৃষক সাইদুর ইসলাম বলেন, সারের দাম, শ্রমিকের মজুরি, সেচ সব মিলিয়ে যা খরচ তার চেয়ে আলুর অনেক কম দাম পাচ্ছি আমরা। এবার আলুর উৎপাদন খরচ আর দামের ফারাক মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের।
আগাম আলু বৃষ্টির কারণে ছোট হয়েছে। উত্তর বঙ্গের আলু বড় ও দাম কম। বেপারীরা বড় আলু কম দামই খোঁজেন।
সবজি ক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আলুর দাম বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা। শীতকালীন সবজির লাগামহীন দাম ছিলো কিছু দিন আগে। তখন আলুর চাহিদা মানুষের বেশি ছিলো। ফলে আলুর দামও ছিলো। এখন শীতকালীন সবজির দাম মানুষের অনেকটা নাগালের মধ্যে এসেছে তাই আলুর প্রতি মানুষের চাহিদাও কিছুটা কমেছে। বড় আলুটা আমরা স্বাভাবিক কিনি।
জেলার হিমাগার সূত্রে জানাগেছে, গত বছর জেলায় অধিক আলু উৎপাদন হয়েছিল। যার কারণে আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমাগেরর আলুটা বাজারে পাচ্ছি। ফলে নতুন আলুর চাহিদার ওপর প্রভাব পড়েছে। নতুন আলু বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। যার কারণে আলুর চাহিদা কম, দামও কম। এ জেলা থেকে উত্তরের জেলা গুলোতে আগাম আলু বেশি চাষ হয়। তার কারণে কম দামেও বেপারী পায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু বীজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৃষ্টির আগ পর্যন্ত জেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। আর বৃষ্টির কারণে ৩৫ হাজার ৫০০ হেক্টর আলু আবদ হয়। তা জেলার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ জেলা আগাম আলু তেমন আবাদ হয় না৷ আলাদা আগাম আলুর তথ্য রাখা হয় না। আর এখন উত্তরের আলু বাজারে বেশি থাকায় আলুর দাম কম। এখনো আবার পুরাতন আলু আছে বাজারে।
সাননিউজ/এমআর