শফিক স্বপন মাদারীপুর: মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বালিগ্রাম থেকে বিলুপ্তপ্রায় গন্ধগোকুল উদ্ধার করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। লম্বা লেজ, ডোরাকাটা শরীর ও চোকামুখ বিশিষ্ট প্রাণিটিকে দেখতে ইতোমধ্যে সেখানে ভীড় করছেন শত শত মানুষ।
বিরল প্রজাতির প্রাণিটির জীবন বাঁচাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানিয়েছে স্থানীয়রা। বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকেও বিষয়টি অবহিত করেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে অদ্ভুত একটি একটি প্রাণিকে দেখতে পায় স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এ সময় তারা ওই প্রাণিটিকে ধরে আটকে রাখে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজন বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে দেখি মুরগি খাওয়ার চেষ্টা করছে প্রাণিটি। পরে স্থানীয় লোকজনরা মিলে সেটিকে আটকে করি। আমরা ওই প্রাণিটিকে অনেক কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রাণিটি কিছুই খাচ্ছে না।’
নুরুল ইসলাম নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘এমন প্রাণি আগে কখনো দেখিনি। আমরা এই প্রাণিটিকে সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘বিরল প্রজাতির প্রাণিটিকে রক্ষার জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা প্রাণিটি উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করবে।’
প্রসঙ্গত, মূলত বন-জঙ্গলে এক সময় দেখতে পাওয়া যেত গন্ধগোকুল নামের এ প্রাণিটিকে। কিন্তু বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় এ প্রাণিটিও বিলুপ্তির পথে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে এই গন্ধগোকুল।
আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল দেখতে পাওয়া যেত। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এরা মাঝারি আকারের স্থান্যপায়ী প্রাণি। নাকের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত ৯২-১১২ সেন্টিমিটার, এর মধ্যে লেজই ৪৪-৫৩ সেন্টিমিটার। লেজের দৈর্ঘ্য ৪৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আকার ৫৩ সেন্টিমিটার। ওজন ২.৪-৫.০ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে গন্ধগ্রন্থি থাকে। গন্ধগোকুলের স্থূল ও রুক্ষ বাদামি-ধূসর বা ধূসর-কালো লোমে আবৃত। এরা মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম, পাখি ও ছোট প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে গন্ধগোকুল।
সান নিউজ/এমকেএইচ