গিয়াস উদ্দীন রনি, নোয়াখালী: নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর বারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ফলাফলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এক প্রার্থীকে পরাজিত ঘোষণা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরাজিত প্রার্থীর নাম সাইয়েদ আহমদ। তিনি চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাতের দিকে উপজেলা হলরুমে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইয়েদ আহমদ অভিযোগ করেন, ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ফলাফলের কাগজ অনুযায়ী তিনি ২৮৯ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতীক ছিল চশমা। তার মোট প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৮৭১ ভোট। আর প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মো. সামছুল আলম পান ৪ হাজার ৫৮২ ভোট। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব করেন। একপর্যায়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা ফলাফল পরিবর্তন করে ঘষা মাজা করে এক কেন্দ্রের দুটি ফলাফল পত্র তৈরি আমাকে ১১ ভোটে পরাজিত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, আমি স্থানীয়ভাবে ঘোষিত ফলাফলে ২৮৯ ভোটে বেশি পেয়ে নির্বাচিত হই। এই ফলাফলের কাগজে ১০টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে। আমি আমার পোলিং এজেন্টদের মাধ্যমে রাত আটটার সময় এই ফলাফল হাতে পাই। রাত সাড়ে আটটার সময় রিটানিং কর্মকর্তার কাছে ওই ফলাফল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বেআইনিভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আম্বরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এ বি এম নোমান ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সোনাইমুড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো.বরকত উল্যাহ এর যোগসাজশে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সকল প্রার্থীর ভোটকে ঘষা মাজা করে পরিবর্তন করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. সামছুল আলমের নৌকা প্রতীককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সাইয়েদ আহমদ অভিযোগ করেন, ফলাফল পাল্টে দেওয়ার বিষয়ে রিটানিং কর্মকর্তার কাছে তাৎক্ষণিক অভিযোগ করে কোন সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি। উল্টো রিটানিং কর্মকর্তা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণায় দৃঢ়তা দেখিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ভুক্তভোগী প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফল বাতিলের দাবি জানান এবং আইনি প্রক্রিয়ায় সেটা মোকাবিলা করবেন বলেও জানান করেন।
এ বিষয়ে মো. সামছুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ উঠলে এটা নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্টরা বুঝবে। এটা তাদের বিষয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বরগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আম্বরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এ বি এম নোমানের ফোনে কল করা হলেও দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সোনাইমুড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. বরকত উল্যাহ মোবাইলে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে তিনি বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি পরে কথা বলব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খান জানান তাকে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।
নোয়াখালী জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, নির্বাচন শেষে প্রিসাইডিং অফিসার উপজেলা কম্পাউন্ডে হাতে হাতে যে ফলাফল রিটানিং কর্মকর্তাকে দিবে সেটিই প্রকৃত ফলাফল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তাকে অবহিত করা হলে তিনি এ বিষয়ে রিটানিং কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন।
সান নিউজ/এমকেএইচ