নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতায় কমপক্ষে নয়জন নিহত হয়েছেন। বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আহত হয়।
চাঁদপুর
বুধবার দুপুরে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের বাহের চরে নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত হয়েছেন।
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান মোল্লা জানান, উপজেলার নীলকমল দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ৩০০ মিটার দূরে একজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে তাকে বহিরাগত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিক তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বগুড়া
জেলার গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নে ভোট চলাকালে দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে বিরোধের জের ধরে জাকির হোসেন নামের একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দুপুরে জাইগুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন, মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া সংঘর্ষে আরও চারজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা খোকন মন্ডলের স্ত্রী কুলসুম (৪০)। তিনি ওই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ছোবেদার নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। অন্যরা হলেন- মধ্যপাড়ার মৃত মকবুলের ছেলে আলমগীর (৩৫), পশ্চিমপাড়ার মৃত ইফাতুল্লা প্রামাণিকের ছেলে আব্দুল রশীদ (৪৮) এবং উত্তরপাড়ার মৃত ছহির উদ্দিন আকন্দর ছেলে খোরশেদ আকন্দ (৬৫)।
মানিকগঞ্জ
জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রের পাশে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে সমেলা খাতুন (৫০) নামে এক নারী নিহত হন। দুপুরে ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বাঁচামারা ইউনিয়নের ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই নারী মাঝে পড়ে নিহত হন।
গাইবান্ধা
বিকেলে জেলার সাঘাটা উপজেলার জুম্মাবাড়ি ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রে এক মেম্বার প্রার্থীর সমর্থককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবু তাহের (৩৯) মামুদপুর গ্রামের মো. ওমর আলীর ছেলে।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতায় আবু তাহের নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) ইলিয়াস জিকো এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
চট্টগ্রাম
দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অংকর দত্ত নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘দুপুরে আনোয়ারা থেকে অংকর নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে তেমন আঘাতের চিহ্ন নেই। স্বজনদের দাবি, প্রতিপক্ষের কিল-ঘুষিতে তার মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে নিহতের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিদারুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘চাতরী ইউনিয়নে দুই মেম্বারপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
সাননিউজ/এএএ