নিজস্ব প্রতিনিধি, শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে দুলুখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা। ভোট কেন্দ্রটি সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক ও উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম ইসমাইল হকের বাড়ি থেকে আনুমানিক দুইশ গজের মধ্যে।
নির্বাচনে তাদের নিকট আত্মীয় দেলোয়ার হোসেন বেপারী চশমা প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সিকদার (আনারস)। বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় প্রথমে ককটেল বিস্ফোরণ করে কেন্দ্রে দখলের চেষ্টা করে তারা।
এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করে। ব্যর্থ হয়ে পরে সন্ত্রাসীরা দুই শতাধিক লোকজন নিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র রামদা, ছেনদা, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ পুনরায় দুপুর সোয়া ২টায় আক্রমণ করে। এ সময় কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ ও আনসাররা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের ৪১ রাউন্ড গুলি শেষ হয়ে গেলে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও বিজিবি এসে কেন্দ্র রক্ষা করার জন্য গুলি ছোঁড়ে।
পুলিশ ও বিজিবির গুলি শেষ হয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্রে ঢুকে শত শত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কেন্দ্র দখল করে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রের ভিতরে আগুন ধরিয়ে দেয়। অগ্নিকাণ্ডে কেন্দ্রের ভিতর থাকা মালামালসহ আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এ সময় পুলিশ ও আনসার ও বিজিবি প্রায় ২ শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলাকারীরা শরীয়তপুরে কর্মরত যমুনা টিভি ও প্রথম আলোর সাংবাদিকের ২টি ও পোলিং অফিসারের একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
ঘন্টাব্যাপী হামলায় আনসার, পুলিশ, সাংবাদিক সহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। খবর পেয়ে শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী আধাঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাজিবুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেয়া হয়। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভোজেশ্বর ইউনিয়নের আনারস মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল হক সিকদার বলেন, সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক ও নড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম ইসমাইল হকের নিকট আত্মীয় এবং সমর্থক নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী (চশমা) দেলোয়ার হোসেন বেপারী নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে সে স্থানীয় ও বহিরাগত দুই শতাধিক সন্ত্রাসী এনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, রামদা, ছেনদা হকিস্টিক, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ৫নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র দখল করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় হামলাকারীরা ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। লোকজনদের মারিপিট করে আমি কর্তৃপক্ষের কাছে এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
তবে দেলোয়ার হোসেন বেপারীর বক্তব্যের জন্য বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
৫ নং ওয়ার্ড দুলুখন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, দুর্বৃত্তরা সকাল ১১টায় প্রথমত ককটেল ফাটিয়ে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তৎপর থাকার কারণে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে তারা ২-১৫ মিঃ পুনরায় হামলা করে কেন্দ্র দখল করে। পুলিশ কেন্দ্র রক্ষার্থে পাল্টা আক্রমণ করতে গিয়ে গুলি শেষ হয়ে যায়।
এ সময় হামলাকারীরা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়। আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভোট গ্রহন স্থগিত করে দিয়েছি।
নড়িয়া থানার ওসি অবনি শংকর কর বলেন, দুর্বৃত্তরা হামলা করে ৫নং ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্র দখল করে আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। এ সময় আইন শৃংখলা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করেছে। ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ভোট গ্রহণকাজে নিয়োজিতদেরকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। দোষী ব্যক্তিদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাজিবুল আলম বলেন, কেন্দ্রে দূর্ঘটনার পরে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। আমি সরেজমিন তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দিব। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
সান নিউজ/এমকেএইচ