কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) থেকে: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কেন্দ্রে আশানুরূপ ভোট পায়নি নৌকা। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির কেন্দ্রে তার পরিবারের সদস্যদেরও ভোট পায়নি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।
কোন কোন কেন্দ্রে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদেরও ভোট পড়েনি নৌকায়। কোন কোন কেন্দ্রের আওয়ামী লীগের ভোট দুই অঙ্ক স্পর্শ করেনি। অথচ প্রতিটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্য সংখ্যা ৫৫ জন। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খীরা।
জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের চতুল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খন্দকার আবুল বাশার মাত্র পাঁচ ভোট পেয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মলয় কুমার বোস ওই কেন্দ্রে ভোট দেন। তার পরিবারে ভোটার সংখ্যা ৬ জন। অথচ ওই কেন্দ্রে নৌকায় ভোট পড়েছে ৫টি।
একই ইউনিয়নের শুকদেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম খান। ওই কেন্দ্রে নৌকায় ভোট পেয়েছে ১২টি। অথচ সুকদেবনগরে নজরুল ইসলাম খানের রয়েছে স্থানীয় বড় একটি গ্রাম্য দল।
একই অবস্থা বকুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। এই কেন্দ্রে নৌকায় ভোট পড়েছে ১০টি। এই কেন্দ্রে উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল সিকদার, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু এবং বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের আহবায়কের পদ থেকে সদ্য বহিস্কৃত মহম্মদ রফিকুল ইসলাম ভোট দেন।
দাদপুর ইউনিয়নে রাঙ্গামুলারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভোট পেয়েছে ৯টি। বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর ইসলামী মিশন ও ত্রিপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা মার্কার প্রার্থী ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ ভোট।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মলয় কুমার বোস বলেন, ওই ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একদিনের জন্যও নির্বাচনী ক্যাম্পে আসেননি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নিকট থেকে খরচ নিয়েছেন কিন্তু কাজ করেছেন চশমা প্রতীকের জন্য। আর আমার পরিবারের এক সদস্য বাড়িতে ছিল না।
শুকদেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা মাত্র ১২ ভোট পাওয়ার ব্যাপারে চতুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল খান বলেন, গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী চেয়ারম্যান ভিন্ন দলের কর্মীদের দিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের নির্যাতন করেছে। একজন দশ কেজি বোঝা বহন করতে পারে! তাকে একশ কেজির বোঝা দিলে যা হবার তাই হয়েছে।
এ ব্যাপারে চতুল ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী খন্দকার আবুল বাশার বলেন, ‘আমাকে নৌকা দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করেছিল। কিন্তু স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে আমি বিজয়ী হতে পারিনি। আমি এর আগে দুইবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে একবার ১৪ শ, আরেকবার ১৯শ ভোট পেয়েছিলাম। অথচ এবার নৌকা নিয়ে ৭শ ভোট পেলাম। এটা আমার জন্য দুর্ভাগ্য।’
ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদেরও নৌকায় ভোট না দেয়া প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এমএম মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য এবং আমাদের ব্যর্থতা।
সান নিউজ/এমকেএইচ