সাভার প্রতিনিধি:
মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের বাজে প্রভাব সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও পরেছে। এই ভাইরাসে প্রতিদিনি দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।
করোনার প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটির মাধ্যমে অঘোষিত লকডাউন দিয়েছিলো সরকার। সে সময় বন্ধ করা হয়েছিলো হাট-বাজার, দোকান, শপিংমল ও গণ পরিবহনসহ পোশাক কারখানাগুলো।
কিন্তু দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সাধারণ ছুটির শেষ করা হয়েছে মে মাসের ৩১ তারিখে। তবে এর আগেই স্বাস্থ্যবিধির নানা নির্দেশনার শর্ত দিয়ে দেশের মূল অর্থনীতির চাকা পোশাক খাত খুলে দেওয়া হয়েছে। পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার পর উৎপাদন ঠিক রাখলেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়মকানুন। এ কারণে শিল্প এলাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
সাভারে পোশাক কারখানা বেশি হওয়ায় এ এলাকায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। এই এলাকার স্থানীয় প্রশাসন পোশাক কারখানাগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানোর নির্দেশ দিলেও বেশকিছু পোশাক কারখানা তার তোয়াক্কাও করছে না।
সম্প্রতি সরজমিনে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কারখানাগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি কিংবা শারীরিক দূরত্বের বিধান। সকাল হলেই গণপরিবহনে গাদাগাদি করে কারখানায় যাচ্ছেন শ্রমিকরা। কারখানার সামনে জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা তো নেই, উল্টো গাদাগাদি করে কর্মস্থলে প্রবেশ করছেন তারা।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু কিছু কারখানা ভেতরে প্রবেশের পর বাথরুমে সাবান পানিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও নেই শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা।
এছাড়া কর্মস্থলে শারীরিক কোনো দূরত্ব নেই। সেই আগের মতই যে যার মত কাজ করছেন। কারখানার ভেতরে কারো একটু হাঁচি-কাশি এলে পরতে হচ্ছে বিপদে। তাকে তৎক্ষণাত কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এ মুহূর্তে চাকরি হারানোর ভয়েও রয়েছেন অনেক পোশাক শ্রমিক।
স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে সাভার আশুলিয়ার স্থানীয় মাঠ পর্যায়ের শ্রমিক নেতারা বলছেন, সাভারের প্রায় ৭০০ পোশাক কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। তারা অনেক কারখানা দেখেছেন সকাল বিকেল দলবদ্ধভাবে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করছেন আবার কাজ শেষে কারখানা থেকে বের হচ্ছেন। পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এখনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সামনে করোনা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে ধারণা করছেন শ্রমিক নেতারা।
যত স্বাস্থ্যবিধিই মানা হোক না কেন শ্রমিকরা পোশাক কারখানায় কোনোভাবেই নিরাপদ নয় উল্লেখ করে শ্রমিক নেতা বাংলাদেশে গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, আমি নিজে অনেক কারখানায় দেখেছি কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আবার অনেক কারখানায় মানা হচ্ছে। কিন্তু আমরা আসলে জানি না স্বাস্থ্যবিধি কী? কারখানায় প্রবেশের সময় হাত ধুলে বা মাস্ক পরলেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। কারখানার ভেতরে শ্রমকিরা যে পণ্য বা কাপড় তৈরি করে সেখানেও স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করা প্রয়োজন। কারণ একটি পণ্য বা তৈরি পোশাক একজন শ্রমিক নিজে প্রস্তুত করতে পারে না। তাদের একে অপরের সাহায্য নিতে হয়। তাই সবাই সবার সংস্পর্শে আসে শারীরিক দূরত্বের ভেতরে থাকলেও সংক্রমিত হওয়ার ভয় থেকেই যায়।
এদিকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিলো।
উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা বলেন, জীবন এবং জীবিকা দুটিই আমাদের প্রয়োজন। শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য আমরা বিভিন্ন স্থানে প্রস্তাবনা দিয়েছি। যেখানে বলা হয়েছে প্রতিটি পোশাক কারখানায় আলাদা আলাদা আইসোলেশন বেড তৈরি করতে হবে। পিসিআর ল্যাব তৈরি করতে হবে। নিজ নিজ দ্বায়িত্বে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার সু ব্যবস্থা করতে হবে।
সান নিউজ/ আরএইচ