নিজস্ব প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে বৃষ্টিতে আলু বীজ নষ্ট হয়ে ১৫৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি সামনে রেখে ফের আলু আবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা। তবে সার, বীজ আলু ও শ্রমিক সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, বীজ সংকটের কারণে হিমাগারে রাখা নিম্নমানের খাবার আলু জমিতে রোপণ করছেন এখন কৃষকরা। বৃষ্টির আগে যেসব আলুর দাম ছিল প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) ৫০০ টাকা সেগুলো কিনতে হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকায়। হল্যান্ড থেকে আমদানি করা বাক্স আলু বীজ (৫০ কেজি) এখন ১০-১১ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এটা বৃষ্টির আগে ছিল ৫-৬ হাজার টাকা। তবে আলু বীজের পাশাপাশি কৃষক পড়েছেন শ্রমিক সংকটে। অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী কৃষিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
এই অঞ্চলের আলু চাষ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমজীবী মানুষের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। আলু রোপণে মৌসুমের শুরুতে বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক এলেও টানা বৃষ্টিতে জমিতে কাজ না থাকায় শ্রমিকরা ফিরে গেছেন নিজ নিজ জেলায়। এসব শ্রমিক ফিরে আসতে শুরু না করায় শ্রমিক সংকটে পড়েছেন স্থানীয় চাষীরা।
অন্যদিকে, টানা বৃষ্টির পানির কারণে ধুয়ে গেছে জমিতে প্রয়োগ করা সার। তাই নতুন করে জমিতে আবার সার দিতে হচ্ছে কৃষককে। কানি প্রতি জমিতে নতুন করে ১৫-১৮ বস্তা সার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এর আগে একই জমিতে ২৫-৩০ বস্তা করে সার প্রয়োগ করেছেন। সার, বীজ ও শ্রমিকের উচ্চ মূল্যের কারণে আলুর উৎপাদন খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ হবে বলে দাবি কৃষকদের।
সরেজমিনে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বিভিন্ন কৃষি জমি ঘুরে দেখা গেছে বিলের উঁচু জমিগুলো আবারও আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করছেন কৃষক। কিছু উঁচু জমিতে নতুন করে আলু রোপণ চলছে।
সদর উপজেলার বজ্রযোগনী গ্রামের আলুচাষি সানোয়ার বলেন, আগের জমিতে রোপণ করা আলু সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার ঋণ করে আলু লাগাইতাছি। আমার খুব কষ্ট হইতেছে। সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনাই। নতুন আলু বীজ না পাওয়ায় হিমাগারে রাখা খাবার আলু বীজ রোপণ করছি।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পুরাপাড়া গ্রামের শাহিন বলেন, আড়াই কানি (৩৫০ শতাংশ) জমিতে আলু লাগিয়েছিলাম। সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার লাগাইতাছি। আমরা সারও পাই না বীজও পাই না। খরচ আমাদের ডাবল হইতেছে। আমরা সরকারি কোনো সাহায্যও পাচ্ছি না।
জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বৃষ্টির আগে ১৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আলু বীজ রোপণ করা হয়েছিল। টানা বৃষ্টিতে জেলার ছয় উপজেলায় ১৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমির রোপিত আলু পানিতে তলিয়ে যায়। এসব জমিতে রোপিত ২৭ হাজার টন বীজ আলু নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকের ১৫৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের দাবি, ক্ষতি এর চেয়েও বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, বৃষ্টিতে আলু চাষিদের ১৫৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এ ক্যাটাগরির বীজগুলো বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষক এখন বি ও সি ক্যাটাগরির বীজ দিয়ে আলু রোপণ করতেছে। এতে উৎপাদন অনেকটা কম হবে।
এ দিকে সারের উচ্চ মূল্যের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সার বিক্রির তিন প্রকার ডিলার রয়েছে। বিসিআইসি ডিলারের কাছ থেকে না কিনে অনেকে খুচরা ডিলারের কাছ থেকে একটু বেশি দামে সার কিনে থাকেন। অভিযোগ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সান নিউজ/নাজির/এফএইচপি