নিজস্ব প্রতিনিধি, ভোলা: নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ভোলায় পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর আয়োজনে জেলা প্রশাসন কার্যলয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণ্যাঢ্য র্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়।
পরে জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক ই-লাহীসহ অনান্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভোলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম, ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার দোস্ত মাহামুদ, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ শফিকুল ইসলাম, ভোলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এম হাবিবুর রহমান, ভোলা সদর উপজেলার সাবেক কমান্ডার অহিদুর রহমানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদার মুক্ত হয় ভোলা। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সারা দেশের চূড়ান্ত বিজয়ের ৫ দিন আগে ভোলা মুক্ত করেন। এই দিন ভোরে পাকিস্তানি সেনারা একটি লঞ্চে করে গোপনে পালিয়ে যায়।
এপ্রিলের শুরুর দিকে ভোলা ওয়াপদা ভবনে ক্যাম্প করে অবস্থান নেয় পাক হানাদার বাহিনী। ওই ভবনের ২টি কক্ষকে টর্চার সেল বানিয়ে নিরীহ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। ওয়াপদা ভবনের পাশেই রয়েছে বধ্যভূমি যেখানে শতশত মুক্তি পাগল মানুষকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়ে ছিলো।
ভোলার দেউলা, বাংলাবাজার এবং দৌলতখানের গুপ্তেরগঞ্জ বাজারে সম্মূখ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর পাকসেনাদের মনোবল ভেঙ্গে পরে। ভোলার মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে ঘিরে শহর দখলের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। এমন সময়ে ১০ ডিসেম্বর ভোর রাতে ভোলা লঞ্চ ঘাট থেকে লঞ্চ যোগে পাকবাহিনী ভোলা থেকে পালিয়ে যেতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে মিত্র বাহিনীকে খবর দেয়া হলে চাঁদপুরের কাছে মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় পাকসেনাদের বহনকারী লঞ্চটি ডুবে যায়।
পাকবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর ১০ ডিসেম্বর সকালে কালেক্টরেট ভবনের সামনে পতাকা উড়িয়ে ভোলাকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধারা। এভাবেই ভোলা হানাদার মুক্ত হয়। ভোলা মুক্ত দিবস উপলেক্ষ্যে ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নানা আয়োজন করেন। দিনের শুরুতে ওয়াপদা কলোনি বধভূমির শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পর্ঘ্য অর্পণ করবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
পরে ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানসহ নানা শ্রেণি পেশার অংশ গ্রহণে একটি বিজয় র্যালি বের করা হবে। পরে ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তারা অংশ গ্রহণ করবেন।
সান নিউজ/এমকেএইচ