নিজস্ব প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীর কাটাখালীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা পৌর মেয়র কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিষয়টি নিয়ে চলমান তুমুল বিতর্কের মধ্যেই সেই অডিও ক্লিপ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মেয়র আব্বাস আলী। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের ওই অডিও এডিট করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এর আগে গত রোববার থেকে ফেসবুকে এমন একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল।
এদিকে, রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তিন কাউন্সিলর নগরীর তিনটি থানায় এই অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন বোয়ালিয়া মডেল থানায়, ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন চন্দ্রিমা থানায় এবং ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন রাজপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদের মধ্যে কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে। তৌহিদুল হক সুমন নগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে পদ হারান তিনি। এছাড়া আনোয়ার হোসেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৯ মের দুটি ভিডিও সংবলিত নিজের পোস্ট শেয়ার করে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এবং আমার কিছু কথা’ শিরোনামে ব্যাখ্যাটি দেন তিনি।
মেয়র আব্বাস আলী লিখেছেন, ‘গতকাল থেকে কিছু সংবাদমাধ্যম এবং ফেসবুকে আমার কথোপকথনের একটি অডিও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। অডিওটি সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন, আপনারা বুঝতে পারবেন, অডিওটি এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।আমি কখনো কারও সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণ করা হবে না কিংবা কেউ ম্যুরাল নির্মাণ করলে বাধা দেয়া হবে, এ রকম কথা কারও সামনে কখনো বলিনি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করি এবং মমতাময়ী জননী বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দেখানো পথে একজন সাধারণ কর্মী হয়ে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
পোস্টের শুরুতে আব্বাস আলী লিখেছেন, ‘গত ২৯ মে আমার ফেসবুক আইডি থেকে কাটাখালী পৌরসভার প্রবেশদ্বারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণ করা হবে মর্মে (ভিডিও) আপলোড দিয়েছিলাম। গেট নির্মাণের জন্য সকল প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু ঢাকা টু রাজশাহী মহাসড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান থাকায় গেটটি নির্মাণ সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। চার লেন রাস্তা নির্মাণের জন্য মহাসড়কের দুই ধারে কতটুকু জায়গা বাড়ছে, সেটা নিশ্চিত হওয়ার পরে আশা করছি আগামী বছরের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় গেট নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করতে পারব ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে, আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে রাজশাহীর তিনটি থানায় তিন কাউন্সিলরের লিখিত তিনটি অভিযোগ প্রায় অভিন্ন। ২২ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত সংবাদে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন ও আনোয়ার হোসেন নিজ নিজ কার্যালয়ে বসে এই সংবাদ দেখেন। আর তৌহিদুল হক সুমন এই সংবাদ দেখেন শাহমখদুম থানা আওয়ামী লীগ সভাপতির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বসে।
তারা উল্লেখ করেছেন, সংবাদে একটি অডিও ক্লিপ প্রচারিত হয়। এতে কাটাখালী পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্বাস আলী বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনকে পাপ কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
পৌর মেয়র আব্বাস আলীর ফাঁস হওয়া ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটিতে তাকে বলতে শোনা যায়, বড় হুজুরের সঙ্গে কথা হয়েছে। রাজশাহী সিটি গেটে জীবন দিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বসাতে দেবে না। ম্যুরালটা দিলে ঠিক হবে না। আমার পাপ হবে। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক এটা সঠিক না। বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আল্লাহকে নারাজ করবো নাকি?
প্রসঙ্গত, রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্বাস আলী ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
সান নিউজ/এমকেএইচ