নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের বাসভবনে গুলি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
গতকাল শনিবার (২০ নভেম্বর) রাতে সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাতে পেলেও এখন পর্যন্ত সেই দুই অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অপর এক আসমিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রধারী ওই দুই ব্যক্তি হলেন বসুরহাট পৌরসভা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদুল্যার ছেলে মো.মানিক ওরফে বুবির হোলা (২৮) ও উপজেলার মুছাপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল খায়েরের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে পিচ্ছি মাসুদ (৩৫)।
তারা দুজনই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। মানিক ও মাসুদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গত শনিবার (২০ নভেম্বর) রাতে উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে খিজির হায়াত খানের বাড়িতে হামলার সময় মানিক বন্দুক উঁচিয়ে বেশ কয়েকটি গুলি চালায় আর পিচ্চি মাসুদকে পিস্তল হাতে মহড়া দিতে দেখা যায়। পরে ভুক্তভোগী খিজির হায়াত খানের বাসভবনের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত অস্ত্রধারীদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তি যোদ্ধা খিজির হায়াত খান অভিযোগ করেন, গতকাল শনিবার (২০ নভেম্বর) নোয়াখালী জেলা স্কুল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় কাদের মির্জার গত ১০ মাসের অপরাজনীতির নিয়ে তিনি বক্তৃতা রাখেন। পরে এর জের ধরে একই দিন রাত পৌনে ৮টার দিকে তার বাড়িতে কাদের মির্জার অনুসারীরা সশস্ত্র হামলা চালায়।
অস্ত্রধারী মাসুদ চলতি বছরের ১৩ মে বিকেল পাঁচটার দিকে তার সহযোগী কেচ্ছা রাসেলসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা অতর্কিতে বসুরহাট পৌরসভার করালিয়া এলাকার একটি দোকানে হামলা চালায়। সেখানে অবস্থানরত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারী যুবলীগ নেতা রাজীব ও ছাত্রলীগ নেতা রাহীমকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছুড়ে হামলাকারীরা।
গুলির পর পিচ্ছি মাসুদ হাতে থাকা পিস্তল কোমরে লুকিয়ে রাখেন। তবে কেচ্ছা রাশেল কিছুক্ষণ সেখানে অস্ত্র হাতে ঘোরাঘুরি করেন। ওই হামলা ও গুলির ঘটনায় মিজানুর রহমানের ৫ জন অনুসারী আহত হয়েছিলেন। পরে কোম্পানীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি গুলির কার্তুজ উদ্ধার করে।
ওই ঘটনার চার মাস পর গত ৭ সেপ্টেম্বর রাসেল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। তবে কেচ্ছা রাসেলের অন্যমত সহযোগী ডাকাতি মামলার আসামি মাসুদ প্রকাশ্যে বসুরহাট বাজারে ঘোরাফেরা করলে পুলিশ আজও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে অস্ত্রধারী মানিককে শনাক্ত করেছেন। ওই সময় আরেক অস্ত্রধারী পিচ্চি মাসুদও অস্ত্র হাতে সেখানে ছিল বলে জানা যায়। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
এ ঘটনায় রোববার (২১ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ধারায় ৩৪ জনকে আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কাদের মির্জার অনুসারী মানিক ওরফে বুবির হোলা দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে পিচ্ছি মাসুদকে।
পুলিশ এ মামলার এজহার নামীয় ৫ নং আসামি উপজেলার চর হাজারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরনবীর ছেলে আব্দুল কাইয়ুমকে (৩৩) গ্রেফতার করে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে।
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার (২০ নভেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের বাড়িতে গুলি, ককটেল হামলা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠে কাদের মির্জার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিক সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়লে সকল মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পর পরই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, কোম্পানীগঞ্জে চলমান রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে কাদের মির্জার অনুসারীরা ৮-১০টি মোটরসাইকেল ও সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে আমার গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা বাসভবনের প্রধান ফটক ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে হামলাকারীরা জানালার কাচ ভাঙচুর করে ১৫ মিনিট ধরে বেশ কয়েকটি হাতবোমার (ককটেল) বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। হামলাকারীরা ঘরে ঢুকতে পারলে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলত।
খিজির হায়াত খান অভিযোগ করেন, এর আগে গত ৮ মার্চ বসুরহাট বাজারে কাদের মির্জার নেতৃত্বে অনুসারীরা আমার ওপর হামলা চালিয়ে ছিলেন। এছাড়াও তার অনুসারীরা আরও একবার আমার ওপর হামলা চালায় এবং দুইবার আমার বাড়িতে বোমা হামলা চালায়।
সান নিউজ/এমকেএইচ