নিজস্ব প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: ময়লার ভাগাড়ের দূর্গন্ধে চলাচল হবিগঞ্জ শহরবাসীর নিত্যসঙ্গী। দীর্ঘদিন ধরে হবিগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পশ্চিমে বাইপাস সড়কে আবর্জনার স্তুপের কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে।
এ নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন, নাগরিক নেতৃবৃন্দরা প্রতিবাদ জানিয়েও আসছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বর্জ্যস্তুপের পাশে দাঁড়িয়ে অনেকবার মানববন্ধন করেছে। জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও, টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
এমনকি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌর নিবার্চনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হলে ৬ মাসের মধ্যে ময়লার স্তুুপ অন্যত্র সরিয়ে নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাস ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
অবশেষে হবিগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ স্বপ্রণোদিত হয়ে দ্রুত পৌরসভার বাহিরে কোন এলাকায় বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক উপায়ে বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণের জন্য মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হবিগঞ্জ শহরের আবর্জনা ফেলার জন্য পৌরসভার বাহিরে কোন এলাকায় বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক উপায়ে বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণের জন্য মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হবিগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জাস্টিস অব দি পিস মোহাম্মদ হারন-অর-রশীদ। গত ১১ নভেম্বর মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদের স্বাক্ষরে এ লিখিত নির্দেশ জারি করা হয়।
লিখিত নির্দেশে বলা হয়, পরিবেশ সংক্রান্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী আইনের ২৫ ধারার ক্ষমতাবলে ওই নির্দেশ জারি করা হয়। এই নির্দেশনার কোন ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কর হবে।
নির্দেশটির অনুলিপি হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ও হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতিকেও পাঠানো হয়েছে।
লিখিত নির্দেশনায় আরও বলা হয়- হবিগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের পশ্চিম পাশে বাইপাস সড়কে অনিয়ন্ত্রিত শিল্প-কারখানার বর্জ্য, পৌরসভার সংগৃহিত ও দৈনন্দিন আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। যে কারণে শহরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে বাইপাস সড়কের দু’পাশের গাছপালা মারা যাচ্ছে।
এছাড়াও আবর্জনায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার কারণেও পরিবেশে দূষণ ছড়াচ্ছে। ফলে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মরত বিচারক, আইনজীবী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতারা নানা ধরণের অসুবিধায় পড়ছেন।
পাশাপাশি আনসার ভিডিপি কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, দি রোজেস কালেক্টরেট স্কুলের কোমলমতী শিক্ষার্থী ও বৃন্দাবন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পরিবেশ দূষণজনিত রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। বাইপাস সড়কের ময়লার স্তুপে পশ্চিমে জেলার আধুনিক স্টেডিয়াম অবস্থিত। ফলে জেলার ছাত্র-যুব সমাজ এবং ক্রীড়ামোদী মানুষ খেলার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
লিখিত নির্দেশে বলা হয়, হবিগঞ্জ-নসরতপুর বাইপাস সড়কটি জেলা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। উক্ত সড়কের পাশে বর্জ্য-উচ্ছিষ্ট ফেলে তা আগুন দিয়ে পোড়ানোর কারণে মারাত্মক পরিশে দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৯ ও ১৫ (১) ধারার টেবিল ১০ অনুযায়ী প্রয়োগ যোগ্য, শাস্তিযোগ্য ও বিচারযোগ্য অপরাধ।
হবিগঞ্জ জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারী আইনের ২৫ ধারার ক্ষমতাবলে হবিগঞ্জ জেলার জাস্টিস অব দি পিস। এ অনুযায়ী হবিগঞ্জ জেলার এখতিয়ারের মধ্যে যে কোন স্থানের সংঘটিত অপরাধের বিচার করার উপযুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বাহিনীকে নির্দেশ দিতে পারেন।
সান নিউজ/এমকেএইচ