নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফে মাদক কারবারির মিথ্যা অভিযোগে অর্ধশতাধিক অল্পবয়সী সুন্দরী তরুণীদের ধরে এনে ধর্ষণ করেছেন বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। র্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে ওসি প্রদীপের ধর্ষণ-সম্পৃক্ততার এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রদীপের ধর্ষণকাণ্ডে সহযোগিতা কারীদের হাতে নির্যাতিত মহিলাদের পক্ষে মামলা দায়ের করে ওই লম্পটদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
জানা গেছে, র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ খায়রুল ইসলাম মেজর সিনহা হত্যা মামলার তদন্তকালে একাধিক নারী-পুরুষ তার কাছে এই অভিযোগ করেছেন। প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ থানা ও থানার বাইরে নির্ধারিত রুমে অসহায় ওই তরুণীদের নিয়মিত ধর্ষণ করতো। এমনকি তার বাহিনীর সদস্যরাও সমানতালে একের পর এক ধর্ষণ করেছে অনেক অসহায় নারীকে। তাদের ধর্ষণের শিকার নারীদের অবস্থা জটিল হলে ধর্ষিতাদের পাঠানো হতো কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দেয়া হয়েছে তাদের চিকিৎসা। এর বাইরেও অনেকে গর্ভবতী না হওয়ার জন্য চিকিৎসা নিলেও লজ্জায় ধর্ষণের কথা স্বীকার করেনি।
প্রদীপের হাতে ধর্ষিত অনেক নারীকে চিকিৎসা দিয়েছেন জানিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারের তৎকালীন মেডিকেল রাইটার মো. ইউসুফ জানান, প্রদীপের হাতে ধর্ষণ ও পাশবিকতার শিকার অন্তত ১৭ নারীর লোমহর্ষক বর্ণনা তিনি কখনও ভুলতে পারবেন না। এর মধ্যে এক তরুণীকে ধর্ষণের পর যৌনাঙ্গে মরিচে গুড়া দিয়ে নির্যাতন করলে ওই তরুণী মৃত্যুর মুখে পতিত হলে, তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
স্থানীয়দের দাবি, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপের সহযোগী হোয়াইক্যং ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউর ও তাদের চিহ্নিত দালালরা অর্ধশতাধিক নারীকে ইয়াবা কারবারি আখ্যা দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে ধরে এনে প্রদীপের কাছে তুলে দিয়েছেন। পরে ওসি প্রদীপ ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন এসব অসহায় নারীদের। তবে প্রদীপের ভয়ে নির্যাতিতা কেউ মামলা না করায় প্রদীপের বিরুদ্ধে সিরিয়াল ধর্ষণের অভিযোগগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর মেজর (অব) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলায় কারাগারে গেলে মুখ খুলছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
ভুক্তভোগী নারীদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হোয়াইক্যং এলাকার আনোয়ার নামে এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে ওসি প্রদীপ ও এসআই মশিউর অর্ধ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অক্ষম ওই ব্যক্তিকে তিন দিন পর বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়।
আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের প্রদীপ ও মশিউরের বিরুদ্ধে প্রতিকার চাইতে আদালতে যায় নিহত ব্যক্তির মেয়ে এবং বোন। খবর পেয়ে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ওই দুই নারীকে তুলে নিয়ে আসে মশিউরের নেতৃত্বে ওসি প্রদীপের লোকজন। থানায় আটকে রেখে গণধর্ষণের পর ইয়াবা দিয়ে অসহায় ওই দুই নারীকে কোর্টে চালান দেয়া হয়।
অন্যদিকে, টেকনাফের নাজিরপাড়ার এক গৃহবধূ জানান, মাদক কারবারি বলে তার স্বামীকে ধরে থানায় নিয়ে ৪৫ লাখ টাকা দাবি করে ওসি প্রদীপ। স্বামীকে ছাড়িয়ে আনতে স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও নগদ ৩ লাখ টাকা নিয়ে থানায় গেলে ওসি প্রদীপের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ওই গৃহবধূর প্রতি। স্বামীকে মুক্ত করে দেয়ার আশ্বাসে তিন দিন আটকে রেখে ওসি প্রদীপসহ কয়েকজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর তাকে বলা হয় তোমার স্বামী ছাড়া পাবে, তুমি ঘরে চলে যাও। কিন্তু পরদিন তার স্বামীর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় বলে জানান ওই মহিলা। ওই সময় ধর্ষণের বিষয়ে মুখ খুললে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয় ওসি প্রদীপ।
এছাড়া, ওসি প্রদীপ ও তার ব্যক্তিগত বাহিনীর হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়া হৃীলার অপর এক গৃহবধূ জানান, ইয়াবা কারবারি আখ্যা দিয়ে অহেতুক তার স্বামীর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসী গিয়াস ও এসআই মশিউর। চাঁদা না দেয়ায় সন্ধ্যায় এসআই মশিউর বাড়িতে এসে ওই মহিলাকে ইয়াবা কারবারি বলে হোয়াইক্যং ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তিন দিন আটকে রেখে ওসি প্রদীপ, মশিউর ও সন্ত্রাসীরা তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর ইয়াবা দিয়ে আদালতে চালান করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এসআই মশিউর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল এবং এসএমএস দেয়ার পরও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সান নিউজ/এমকেএইচ