নিজস্ব প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। আগামীকাল রোববার স্বপ্নের 'পায়রা সেতু' উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা হবে, ফেরি পারাপারেরও দুর্ভোগ ঘুচবে। রাজধানী থেকে কক্সবাজারের চেয়েও কাছের হবে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা।
এ সেতুর ফলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পৌঁছতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পের। পায়রা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের পথ সুগম হবে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, কোস্টগার্ডের সিজি-বেইজ অগ্রযাত্রা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর।
সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কর্ণফুলী সেতুর আদলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালী সেতু এলাকায় থাকবে অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন।
সেতু এলাকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বরিশাল বিভাগের জাতীয় সংসদ সদস্যরা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে বলে জানান পায়রা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল হালিম।
কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলার লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ হয়েছে পায়রা সেতু। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বলা হয় লেবুখালী ব্রিজ। পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ ছিল শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ২০১৩ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালীর লেবুখালীতে এসে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে ১১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয় সেতুটি। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লনজিয়াল ব্রিজ অ্যান্ড রোড কনস্ট্রাকশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
বিভাগীয় শহর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী জেলা শহরের দূরত্ব সড়কপথে ৩৮ কিলোমিটার। আগে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী পৌঁছতে সময় লাগত পাঁচ ঘণ্টা। পাঁচটি ফেরি ছিলো এ দেরির প্রধান কারণ। নব্বইয়ের দশকে চারটি ফেরির স্থানে সেতু নির্মিত হলে কমতে থাকে বিড়ম্বনা। সর্বশেষ ফেরি পারাপার ছিলো স্রোতস্বিনী পায়রা নদীর লেবুখালী পয়েন্টে।
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০টি মেগা প্রকল্পের অন্যতম পায়রা নদীতে নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের ফলে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী হয়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে যেতে ফেরি যুগের অবসান ঘটবে। বরিশাল থেকে পটুয়াখালী যেতে সময় লাগবে এক ঘণ্টারও কম। দুই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছা যাবে কুয়াকাটায়।
আধুনিক প্রযুক্তি ও নান্দনিক নকশা: নদীর দুই পাড়ে দুটি ও নদীর মধ্যে একটি- মোট তিনটি পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে পায়রা সেতু। নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সবচেয়ে দীর্ঘ। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে এ সেতুতে।
সান নিউজ/এফএআর