নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে কিটের অভাবে রবিবার (৭ জুন) থেকে করা যাচ্ছে না করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষা। তাই এমন অবস্থায় নতুন করে নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল আজাদ বলেন, ‘পিসিআর ল্যাব চালু করার পর এক মাসের বেশি সময় চলে গেছে। এই সময়ে ল্যাবটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়নি। তাই আমরা পরিষ্কার-পরিছন্নতার জন্য ল্যাবে আজ নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রেখেছি। তার ওপর কিটেরও সংকট রয়েছে। কিট এলে আবার নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পিসিআর (পলিমেরাস চেইন রিঅ্যাকশন) পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত কার্যক্রম শুরু হয়। এতে প্রতিদিন একটি মেশিনে দুই পালায় ১৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ বৃহৎ এই জেলার বেশির ভাগ মানুষ নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না।
এরই মধ্যে গতকাল শনিবার থেকে কিটের সংকট দেখা দিয়েছে। কুমিল্লার বাইরে ঢাকা ও চট্টগ্রামেও নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা করাতে বেগ পেতে হচ্ছে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে। অনেক প্রতিষ্ঠান নমুনা নিতেও চাইছে না। তাদেরও নমুনার জট লেগে আছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৫৬৯ জনের নমুনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ১০ হাজার ১০৪ জনের। নমুনা পরীক্ষার ফল আসেনি ১ হাজার ৪৬৫ জনের। ৬ জুন পর্যন্ত এ জেলায় রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪১৩ জন। মারা গেছেন ৪০ জন।
এ ব্যাপারে কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান কান্তি প্রিয় দাশ বলেন, ‘কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে এক দিনে সর্বোচ্চ ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। মেশিনের সামর্থ্যের ওপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। একটি মেশিনে ৯৬টি গর্ত রয়েছে। দুটি গর্ত মান নির্ণয়ের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। দুই পালায় আমরা কাজ করছি। আরও একটি মেশিনের কথা আমরা বলেছি। এই মাসেই এ মেশিন আসার কথা রয়েছে।’
কান্তি প্রিয় দাশ আরও বলেন, ‘ল্যাব পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখার জন্য আজ নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রেখেছি। আমাদের ল্যাবে প্রচুর নমুনা জমা আছে। কিট এলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। ঢাকায় নমুনা পরীক্ষার জন্য নিতে চায় না। তাদেরও নমুনা জট রয়েছে। আগে আমরা সাত হাজার কিট পেয়েছিলাম। এগুলো পরীক্ষা করতে গেলে ১০ শতাংশ নানা কারণে নষ্ট হতে পারে। ল্যাব চালুর পর প্রথম দিকে নমুনা ছিল কম, কিন্তু একটি মেশিন আমাদের পুরোপুরি চালু করেই কাজ করতে হয়। তখন কিছু কিট নষ্ট হয়েছে।’
অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল আজাদ আরও বলেন, ‘৩ জুন এলজিআরডিমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও স্থানীয় সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিনের কাছে নমুনা পরীক্ষার জন্য আরেকটি মেশিন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। উনারা বলেছেন, এই মাসের মধ্যে আরেকটি মেশিন আসবে। এ ছাড়া আরও কিট আনার জন্য আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করেছি।’
জেলা করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন ও কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘কিটের সংকটের কারণে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। মানুষ নমুনা দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছেন। প্রতিদিন কুমিল্লার ১৭ উপজেলা থেকে ২০টি করে নমুনা এলে মোট ৩৪০টি নমুনা হয়। সিটি করপোরেশন থেকে ৫০টি নমুনা আসে। সব মিলিয়ে কুমিল্লায় অন্তত ৩৯০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। বাকিগুলো পরের দিনের পরীক্ষার জন্য রাখা হয়। পরের দিন আরও নমুনা আসে। এভাবে জট লেগে যায়। আমরা ঢাকায় আইসিডিডিআরবিতে কিছু নমুনা পাঠাই। কিন্তু সেখানেও জট। কুমিল্লায় কিট পাওয়াসাপেক্ষে নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে।’
কুমিল্লার সংক্রামক বিশেষজ্ঞ নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন স্তরে করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এটা নেতিবাচক খবর। এই মুহূর্তে সবার জীবন রক্ষা করা আমাদের দরকার। জনগণকে বিষয়টি বুঝতে হবে। বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষা করা দরকার।’
সান নিউজ/ আরএইচ