নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় বন্ধ ছিল গণপরিবহন। এমন লকডাউনের মধ্যেও ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ও কর্মস্থলে যাতায়াতে ১৪৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জনের মৃত্যু ও ২৮৩ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ১৫৬টি দুর্ঘটনায় ১৮৫ জন নিহত ও ২৮৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব তথ্য জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনার কারণে এ বছর গণপরিহন বন্ধ থাকায় ঈদযাত্রা সীমিত ছিল ব্যক্তিগত পরিবহনে। তারপরও ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল অতীতের তুলনায় বেশি। বিগত ১৯ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে ১৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত ও ২৮৩ জন আহত হয়েছেন।
উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে একটি ঘটনায় কোনো হতাহত হয়নি। একই সময়ে নৌ-পথে ৬টি ছোট-বড় বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৪৫ জন নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে।
এ সময় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ২৫ মে, এদিনে ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২৪ মে, এদিনে ছয়টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত ও দু’জন আহত হন। এ সময় একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হন গত ১৯ মে। এদিনে ১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ৫৪ জন আহত হন।
এ সময় একদিনে সর্বোচ্চ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ঈদের দিন ২৫ মে, এদিনে ১৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হন।
এ সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ৪৫ জন চালক, ৩৩ জন নারী, ২৮ জন পথচারী, ২৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৪ শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলের ৫ নেতাকর্মী, তিনজন শিক্ষক, তিনজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, তিন সাংবাদিক এবং এক প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।
সংগঠিত দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৫.৭৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮.৯৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১২.০৭ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮.২১ শতাংশ অটোরিকশা, ৭.৭২ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৬.২৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ০.৯৭ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
এর মধ্যে ২৪.১৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩৮.২৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা, ২৭.৫১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ৯.৪০ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে ও ০.৬৮ শতাংশ রেল-যানবাহন সংঘর্ষ দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
এ সময় দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩০.২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৭.৬৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৮.১২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২.৬৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৬৭ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৬৭ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশকালে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সাধারণ ছুটি বা লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল, ৯০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত বন্ধ থাকলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এখন ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনকে বিকশিত করা এখন সময়ের দাবি। সড়ক দুর্ঘটনাকেও মহামারির মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
সান নিউজ/ আরএইচ