নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে জুতার মালা পরিয়ে জনসম্মুখে ঘোরানো হয়েছে। তিনি উপজেলার সিকদারবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুধবার (৩ জুন) জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর ওই ভিডিওটি পোস্ট করা হলে তা রাতেই ভাইরাল হয়।
এ ঘটনার জেরে বজলুর রহমান নামে একজনকে ওই রাতেই পুলিশ আটক করেছে। বাকিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সকালে লাঞ্ছিত শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন বলে নিশ্চিত করেন মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবিদুর রহমান।
ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের জানান, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়ার পর বুধবার সকালে বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ির নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শহিদুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. ফিরোজ, বজলু আকন, আবুল বয়াতী, মো. কামরুজ্জমান, রিন্টু দেওয়ানসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সালিশে শহিদুল ইসলামকে জুতা ও ঝাড়ুর মালা পরিয়ে ঘোরানোর সিদ্ধান্ত হয়।
চেয়ারম্যান নিজের হাতে জুতার মালা পরিয়ে তাকে ঘোরান। বিষয়টি কে বা কারা মোবাইলে ধারণ করে তা ফেসবুকে ছেড়ে দিলে সবার নজরে আসে।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়। তালিকা পাঠানোর সময় ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী মাদ্রাসায় না আসায় সেখানে অভিভাবকের জায়গায় শহিদুল ইসলাম তার মোবাইল নম্বর দেন। সম্প্রতি ওই ছাত্রীর এক বছরের উপবৃত্তির ১৮শ' টাকা ওই মোবাইল নম্বরে জমা হয়। বিষয়টি শহিদুল ইসলাম ওই ছাত্রীর অভিভাবককে জানাতে ভুলে যান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই ছাত্রীর বাবা গত ৩০ মে মাদ্রাসায় এসে শহিদুল ইসলামকে মারধর করেন এবং তার মোবাইলের সিমটি নিয়ে যান।
বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিশ বৈঠক ডাকেন। সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয় শহিদুল ইসলামকে। সালিশ বৈঠকে শহিদুল ইসলামকে গালি দেওয়া হয় এবং জুতার মালা পরিয়ে স্টিমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়। এ ঘটনার পর লজ্জা ও অপমানে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম।
দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আনিসুর রহমান বলেন, 'আমি শুনেছি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ির নির্দেশে শহিদুল ইসলামকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়েছে। তারা এটা না করে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন। এরপর অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনগতভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, 'ওই ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা যে সিমে এসেছে, সেই সিমটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। অফিসের নানা কাজের চাপে আমার বিষয়টি মনে ছিল না। কিন্তু এত ছোট একটি বিষয় নিয়ে এতকিছু হয়ে যাবে, বুঝতে পারিনি। সামান্য একটি ভুলের জন্য যে অবিচার আমার ওপর করা হয়েছে, তার বিচার চাই।'
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার দাস বলেন, 'উপবৃত্তির টাকা নিয়ে যাই হোক, তার বিচারের এখতিয়ার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেই। যা ঘটেছে তা লজ্জাজনক। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।'
সান নিউজ/ আরএইচ