নিজস্ব প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের কয়েককটি গ্রামে পরিবেশ আইন না মেনে গড়ে উঠছে একের পর এক ব্রয়লার মুরগির পোল্ট্রি খামার। এমনকি হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করেও গড়ে উঠছে এসব পোল্ট্রি ফার্ম। ফলে খামারের দুর্গন্ধে দুষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।
নিয়মানুযায়ী জনবসতি এলাকা থেকে ২’শ মিটার দূরে পোল্ট্রি খামার স্থাপনের বিধান থাকলেও আইনের তোয়াক্কা না করে গ্রামের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ পার্শ্ববর্তী স্থানে ওই সব খামার স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ব্যঘাত ঘটছে এলাকার শত শত মানুষের। খামারের দূর্গন্ধের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে এলাকাবাসী এবং খামারের পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী।
এছাড়াও খামারের দূর্গন্ধের কারণে মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে কষ্ট হচ্ছে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। পোলট্রি খামারের মালিক প্রভাশালী হওয়ায় এলাকার লোকজন তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের কমলপুর, হবিণকোলাসহ কয়েকটি গ্রামে ভিতরে কোয়ালিটি এগ্রো লিমিটেড নামক একটি কোম্পানির বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি খামার গড়ে তুলেছে। এসব পোল্ট্রি খামারের ময়লা আবর্জনার কারণে কৃষকরা ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও গ্রামের সাধারণ মানুষ ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দূর্গন্ধের কারণে ঠিকমত চলাচল করতে পারছেন না।
এলাকাবাসী জানান, খামারের দূর্গন্ধে আমাদের রাস্তা দিয়ে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় দিনদিন দূর্গন্ধ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামে বাস করাই কঠিন হয়ে পড়ছে।
তারা আরো জানান, খামারের মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। এ খামার বন্ধ কিংবা বিকল্প কোন ব্যবস্থা না নিলে আমাদের এই এলাকায় বসবাস করা সম্ভব হবে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করছে, শ্বাস কষ্টেও ভুগছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, ব্রয়লার মুরগির খাবার বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন আনিসুর রহমান আদিল নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নতুন পোল্ট্রি ফার্মের কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে হরিণকোলা গ্রামে ফারিহা লেয়ার ফার্ম ও কোয়ালিটি পোল্ট্রি ফার্ম নামে দুটি খামার চালু করা হয়। এমনকি দুটি ফার্মে বিদুৎ সংযোগ প্রদান করে স্থানীয় পল্লী বিদুৎ অফিস।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের নোয়াপাড়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার একটি কপি আমরা পেয়েছি। কপিটি নিয়ে আমাদের আইনজীবির সাথে পরামর্শ করে দেখেছি ওই জমির উপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তারপর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় কোয়ালিটি এগ্রো লিমিটেডের কর্মকর্তা (ইনচার্জ) মোঃ ফয়েজ আহমেদ জানান, আমি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিনি। হরিণখোলায় যে ফার্মটি চালু করেছি, সেটি রিটে উল্লেখ নেই। তাছাড়া আমি পরিবেশেরও কোন ক্ষতি করিনি। খামারের দুর্গন্ধ বন্ধ না ছড়ানোর জন্য প্রতিটি খামারেই বায়ু গ্যাস প্লান্ট স্থাপন করেছি।
হরিণখোলা গ্রামের কোয়ালিটি পোল্ট্রি ফার্মের জমি মালিকের একজন মোঃ ফরহাদিল ইসলাম বলেন, উক্ত কোম্পানির পোল্ট্রি মোরগের বাচ্চা এই মাসের ১৭ তারিখ তুলেছে বিদুৎ সংযোগ দিয়েছেন ১৭ তারিখই।
উক্ত ফার্মের নিরাপত্তারক্ষী মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, এই মাসের ১৭ তারিখ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে এবং ৩৭ হাজার বয়েলার বাচ্চা উঠিয়ে নতুন করে ফার্ম চালু করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, এ জেলা আগে সিলেটের অংশ ছিলো। এ অফিসটি নতুন হয়েছে। তাছাড়া কোয়ালিটি এগ্রো লিমিটেডের বিরুদ্ধে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। তবে ঢাকা থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি, সেটি আমরা সিলেটে পাঠিয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেনকে ফোন দিলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আপন মিয়া বলেন, এলাকাবাসী এ বিষয়ে আমাকে কোন ধরনের অভিযোগ দেয়নি। তাদের পরিবেশ ছাড়পত্র আছে কিনা আমি জানি না।
পোল্ট্রি খাবার স্থাপনের দুরত্ব ও ঘনবসতি এলাকায় স্থাপন নিয়ে জানতে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিলন মিয়া মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়ে জানতে আমার অফিসে আসতে হবে। আমি এখন ট্রেনিংয়ে আছি। না দেখে কিছু বলা যাবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন বলেন, এ জায়গা নিয়ে যেহেতু হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমি কোন কিছু বলতে পারব না। আদালত থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তাই কার্যকর করা হবে।
সান নিউজ/এমকেএইচ