নিজস্ব প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ১১৬ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। যেন লাগাম টেনে থামানো যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে নামক রেলগাড়িটি।
বাল্যবিয়ের জন্য কন্যাশিশুদের নিরাপত্তার অভাব, যৌতুক প্রথা, দারিদ্র্য ও কুসংস্কার সর্বোপরি কন্যাশিশুদের বোঝা হিসেবে অভিভাবকের দৃষ্টিভঙ্গিকে দায়ী করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, করোনাকালীন প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কন্যাশিশু শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১১৬ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।
দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর পাঠদান চালু হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কম হওয়ায় এমন ধারণা করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছে তাদের বাল্যবিয়ে হয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
সচেতন মহলের দাবি কন্যাশিশুদের নিরাপত্তার অভাব, যৌতুক প্রথা, দারিদ্র্য, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার হু-হু করে বেড়েই চলেছে। কোনো ক্রমেই ঠেকানো যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে।
বৃহস্পতিবার চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৩১৬ জন। করোনাপরবর্তী সময়ে পাঠদান শুরুর পর ১১৬ জন ছাত্রী অনুপস্থিত থাকায় ধারণা করা হচ্ছে তারা বাল্যবিয়ের শিকার। এর মধ্যে কয়েকজনের বাড়িতে শিক্ষক পাঠিয়ে এবং কয়েকজনকে মোবাইল করে বাল্যবিয়ের কথা জানা গেছে বলে তিনি জানান।
ধারণা করা হচ্ছে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে- ৬ষ্ঠ শ্রেণির ২৫ জন, সপ্তম শ্রেণির ২২ জন, অষ্টম শ্রেণির ২১ জন, নবম শ্রেণির ১০ জন, দশম শ্রেণির ১৫ জন ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ২৩ জনসহ ১১৬ জন ছাত্রী।
এ সময় দশম শ্রেণির ছাত্রী মৌরিন, মোকলেছিনা, সুলতানা, কলি, সুমাইয়া, বিথি, আছিয়াসহ অনেকে জানায়, করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের বান্ধবী ইতি, সাবানা, রোজিনা-১, রোজিনা-২, মুন্নি, লিমা, সাথী, শিরিনা, শারমিন, লাভলী ও সুফিয়াসহ অনেকের বিয়ে হয়েছে।
এ ব্যাপারে চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাজ্জাদুর রহমান সাজু জানান, বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় আমরা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর শুরু করেছি। ধারণা করা হচ্ছে ৬টি শ্রেণির প্রায় ১১৬ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশের বিবিএফজি প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী মোছা. ফারজানা ফৌজিয়া তন্নি জানান, বিবিএফজি কর্তৃক ২০১৯ সালের মধ্যবর্তীকালীন মূল্যায়ন অনুযায়ী বাল্যবিয়ের হার ছিল ২৪ শতাংশ। ২০১৯ সাল থেকে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা ৪৭৪ জন বালিকাকে নিয়ে কাজ করার কথাও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১১৬ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ের তথ্যটি আমাদের কাছে আসেনি। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাননিউজ/ জেআই